বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় আইন ও এখতিয়ার সমূহ।। (পার্ট -১)

0
আইন হলো বিভিন্ন নিয়ম কানুনের সমষ্টি যা মানুষের আচার আচরন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ একটি সংবিধান গ্রহণ করে যাতে আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রীম কোর্টের গঠন প্রণালী ও কার্যক্রম বর্ণনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অধঃস্তন বিচার বিভাগ, দেওয়ানী ও ফৌজদারী ব্যবস্থা উভয়ের উৎপত্তি হয়েছিল দেওয়ানী আদালত আইন, ১৮৮৭ এবং ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসকল প্রয়োজনীয় আইন চালু আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন- ১৮৭৭, তামাদি আইন ১৯০৮ (Limitation Act), কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ দন্ডবিধি আইন ১৮৬০, গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ আইন ১৮৭১, অস্ত্র আইন ১৮৭৮, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭, দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, মাদক (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯০, নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১। এছাড়াও বাংলাদেশে আরো কতিপয় অন্যান্য বিশেষ আইন আছে, যা কিছু বিশেষ আদালতের ভিত্তিস্বরূপ কাজ করে, যেমন – শ্রম আদালত, শিশু অপরাধ আদালত, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ইত্যাদি।
**দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮
দেওয়ানি কার্যবিধি কোনো ব্যক্তির কাজ বা হুমকির ফলে অন্য ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার বা মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎকর্তৃক দেওয়ানি আদালতে অভিযোগ পেশ ও ডিক্রি লাভের মাধ্যমে তা মীমাংসা করা এবং কখনো বিপক্ষ তা মান্য না করলে আদালতের সাহায্যে ডিক্রি কার্যকর করা। এক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালত মামলা গ্রহণ ও বিবেচনার সময় ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করবে। ১৫৫ ধারার নিয়মাবলি ছাড়াও কার্যবিধিতে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে মোকদ্দমা স্থগিতকরণ, দোবারাদোষ (res judicatta), মোকদ্দমা রুজুর স্থান, মামলা দায়ের, বিবাদী ও সাক্ষীদের সমন, রায় ও ডিক্রি, স্বার্থ, খরচপত্র, ক্ষতিপূরণের ব্যয়, ডিক্রি ও হুকুম কার্যকরকরণ, ডিক্রি কার্যকরকরণের সময়সীমা, বিবাদী বা ডিক্রির দেনাদার গ্রেপ্তার ও দেওয়ানি কারাগারে আটক, সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়, দস্ত্তরি, সরকার বা সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক পদবলে মোকদ্দমা রুজু অথবা সরকার বা সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা, কোনো বিদেশি বা বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক মামলা, বিদেশি শাসক, রাষ্ট্রদূত, বিশেষ দূত কর্তৃক মামলা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, ইন্টারপ্লিডার মামলা, যেসব বিশেষ মামলায় আদালতের মতামত প্রয়োজন, গণ-উৎপাত ও বদান্যতা বিষয়ক মামলা, ডিক্রি বা আদেশ থেকে সম্পূরক মামলা রুজুর আপীল, হাইকোর্ট বিভাগের মতার্থে প্রেরণ, ডিক্রি বা আদেশ পর্যালোচনা, হাইকোর্ট বিভাগের অভিমত, হাইকোর্ট বিভাগ সম্পর্কিত বিশেষ ব্যবস্থা, প্রথম তফসিলের নিয়মাবলি এবং নিয়ম প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবস্থা, এবং ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি, গ্রেপ্তার, অধস্তন আদালতের ভাষা, বিচারের রায় ডিক্রি বা নির্দেশ সংশোধন, সময় বাড়ানো, বিবিধ কার্যক্রম, আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ইত্যাদি নানা বিষয়।
দেওয়ানি কার্যবিধির প্রথম তফসিলের বিধিসমূহে রয়েছে মামলার পক্ষসমূহ, মামলা গঠন, স্বীকৃত এজেন্ট ও অ্যাডভোকেট, মামলা রুজু, সমন জারি ও প্রদান, আরজি-জবাব, আরজি, লিখিত বিবৃতি ও পারস্পরিক দায়শোধ, পক্ষসমূহের হাজিরা ও গরহাজির থাকার ফলাফল, আদালত কর্তৃক পক্ষসমূহ পরীক্ষা, সূত্র উদ্ধার ও পরিদর্শন, স্বীকারোক্তি, দলিলাদি গ্রহণ ও ফেরত, বিচার্য বিষয় গঠন, আইনগত বিষয় বা সম্মত বিষয় অনুযায়ী মামলা নির্ধারণ, প্রথম শুনানিতে মামলা নিষ্পত্তি, সমন, সাক্ষীদের হাজিরা, স্থগিতকরণ, মামলার শুনানি, সাক্ষীদের জেরা, হলফনামা, রায় ও ডিক্রি, ডিক্রি কার্যকরকরণ, সম্পত্তি অর্পণ আদেশ, সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় এবং অন্যান্য কর্মপদ্ধতি, মৃত্যু, বিবাহ, পক্ষসমূহের অস্বচ্ছলতা ও কায়মোকাম, মামলা প্রত্যাহার ও সামঞ্জস্য বিধান, আদালতে অর্থ জমা, খরচের জন্য জামানত, সাক্ষীদের জেরা ও স্থানীয় তদন্ত, হিসাব পরীক্ষা, বাটোয়ারা, সরকার বা সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক নিজ পদবলে মামলা দায়ের বা সরকার ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, স্থল নৌ ও বিমান বাহিনীর লোকের দ্বারা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, করপোরেশনের দ্বারা বা তার বিরুদ্ধে মামলা, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নিজ নাম ব্যতীত অন্য নামে ব্যবসারতদের দ্বারা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, ট্রাস্টি, নির্বাহী ও প্রশাসক কর্তৃক বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, নাবালক ও অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি কর্তৃক বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, নিঃস্ব ব্যক্তির দ্বারা মামলা, স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক সংক্রান্ত মামলা, ইন্টারপ্লিডার মামলা, বিশেষ ধরনের মামলা, হস্তান্তরযোগ্য দলিল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কার্যপ্রণালী, গ্রেপ্তার ও বিচারের আগেই ক্রোক, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ, তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ, ডিক্রি থেকে আপীল, আদেশ থেকে আপীল, নিঃস্ব ব্যক্তির আপীল, অভিমতগ্রহণ, পুনর্বিবেচনা, বিবিধ বিধান এবং হাইকোর্ট বিভাগ ও ছোট আদালত সংক্রান্ত বিধান।
উপরিউক্ত দেওয়ানি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারা এবং সাক্ষ্য আইন ও তামাদি আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী একটি মামলা বা কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়। ঐসব আইনকানুন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হলে একজন আইনজীবী সাফল্যের সঙ্গে কোনো দেওয়ানি মামলা রুজু করতে, চালাতে বা মক্কেলের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে পারেন না, তেমনি একজন বিচারকও সঠিকভাবে মামলার বিচার করতে সক্ষম হন না। কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে দেওয়ানি মামলা ও কার্যপ্রণালী শুরু করা ও পরিচালনা করা সম্ভব নয়, কেননা দেওয়ানি মামলার কার্যপ্রণালী বিধি খুবই জটিল, যেজন্য মামলার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে যথাযথ ওয়াকিবহাল একজন বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ আবশ্যক।।
**সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন- ১৮৭৭
দেওয়ানী মামলা দায়েরের মাধ্যমে বাদী যে প্রতিকার প্রাথনা করে এবং আদালত সে প্রার্থনা অনুযায়ী ডিক্রির মাধ্যমে যে প্রতিকার মঞ্জুর করে তাই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন।
অথবা ,
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে যে সকল সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়া হয় তাই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-
উদাহরনে বলা যায় যে, রহিম তার ১ বিঘা জম করিমের নিকট ৫ লক্ষ্য টাকায় বিক্রি করতে চুক্তি বদ্ধ হয়। বায়না পত্রে ২ লক্ষ্য টাকা পরিশোধ করে। কথা থাকে যে ১৫ দিনের মধ্যে অবশিষ্ঠ ৩ লাখ টাকা দিয়ে সাব কাব্লা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে নিবে। বায়না পত্র হওয়ার ৭ দিন পর রহিম করিম কে জানায় যে সে বায়নার টাকা ক্ষতিপুরন সহ ফেরত দিয়ে জমি বিক্রির চুক্তি থেকে অব্যাহতি চায়।করিম এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত এই সিদ্ধার্ন্তে আসে যে চুক্তি মোতাবেক বাদীর বায়না সুত্রে ১ বিঘা জমি পাওয়ার অধিকার জন্মিয়েছে। এবং সেই সুনির্দিষ্ট অধীকার বাদী সেচ্ছায় পরিত্যাগ না করলে আদালতের কিছুই করার নাই। তাই আদালত বিবাদীকে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে বাধ্য করবেন। এটি ই হলো সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন।
এই আইন মুল আইন এটি দেওয়ানী কার্যবিধী অনুসরন করে চলে।
**তামাদি আইন ১৯০৮ (Limitation Act)
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের সুস্পষ্ট বিধান হল এই আইনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোন মামলা, আপীল কিংবা দরখাস্ত আদালতে দাখিল না করলে পরবর্তীতে আদালত তা গ্রহন করবে না।
তামাদি আইনের ৩ ধারা হতে ২৫ ধারা পর্যন্ত বর্ণিত বিধান মোতাবেক যে কোন ধরণের মামলা আপীল কিংবা দরখাস্ত দাখিলের মেয়াদ সম্পর্কে সাধারণ নিয়মাবলী ব্যতিক্রম সহ উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের মধ্যে ৫ধারায় তামাদি রেয়াত বা বিলম্ব মৌকুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তামাদি আইনের ২৮ ধারায় জবর দখলের মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব বিলপ্ত হয় এবং জবর দখরকারীর স্বত্ব অর্জনের সময়সীমার বিষয়ে নির্ধারিত বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে।
ইহা ছাড়া অত্র আইনের ১৬ও ২৭ ধারায় ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার অর্জনের সময়সীমা সম্পর্কে বিধান রয়েছে। তাই এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব মৌকুফের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে উক্ত বিধান ছাড়া আদালত ন্যায় বিচার এর স্বার্থে তামাদি আইন দ্বারা অনুমোদিত সময় সীমার ব্যাপারে কোন অনুমান বা ক্ষমা প্রদর্শন করবেন না। সুতরাং যে দাবী তামাদি হয়ে যায় তবে সময় সীমা বাড়ানোর এখতিয়ার আদালতের নেই এমনকি তামাতদ কৃত দাবী বা অধিকারকে আদালতে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে না।
তাই তামাদি আইন বলতে এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ আইনকে বুঝায় যে আইন দ্বারা সর্ব প্রকার দাবী বা স্বত্বের দ্বন্দ্বকে অবিরাম গতিকে দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে বরং তা চিরদিনের জন্য নিস্পত্তি করায় সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া এই আইন প্রতারনা মূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করে। ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৯টি ধারা ১ নং তফসিলে ১৮৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে অতএব এই আইনে সব ধরনের বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী সন্নিবেশিত রয়েছে বিধায় একে স্বয়ং সম্পূর্ণ বিধিবদ্ধ আইন বলে গন্য করা হয়। তাই উপরোক্ত আলোচনার সাবতত্বে বলা যায় যে ১৯০৮ সালের তামাদি আইন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন।
**কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধি।
সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি,ডাকাতি,খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং , জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস। পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে।
**দন্ডবিধি আইন ১৮৬০
দন্ডবিধিই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত প্রাচীনতম ও প্রধান আইনসংকলন। এ বিধির আওতাভুক্ত অপরাধসমূহ হচ্ছে: রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ; সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্পর্কিত অপরাধ; সর্বসাধারণের শান্তি বিনষ্টকারী অপরাধ; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা সংঘটিত অথবা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধ; নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ; সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের আইনগত কর্তৃত্বের অবমাননা জনিত অপরাধ; মিথ্যা সাক্ষ্যদান এবং সর্বজনীন সুবিচার বিরোধী অপরাধ; মুদ্রা ও সরকারি ডাকটিকিট সংক্রান্ত অপরাধ; ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অপরাধ; জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, এবং সর্বসাধারণের সুযোগ-সুবিধা, শালীনতা ও নৈতিকতা বিনষ্টকারী অপরাধ; ধর্ম সম্পর্কিত অপরাধ; মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অপরাধ, যথা, জীবননাশক অপরাধ, গর্ভপাত সংঘটন, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি ও বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধ, বিশ্বাস ভঙ্গজনিত ফৌজদারি অপরাধ ইত্যাদি।
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রধানত: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা ঘোষণা দানের প্রচেষ্টা অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করতে অন্যকে প্ররোচিত করা; অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া; বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা; রাষ্ট্রদ্রোহ; বাংলাদেশের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা; এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা সরকারকে কোনো আইনসঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার অথবা এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করা। অন্যদিকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সংক্রান্ত অপরাধের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: সেনা বিদ্রোহে মদদ দান; একজন সৈনিক, নাবিক অথবা বিমানসেনাকে তার দায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে প্ররোচিত করা; সৈনিক, নাবিক কিংবা একজন বিমানসেনাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনকালে আঘাত করতে প্ররোচিত করা; একজন সৈনিক, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে তার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করা; দলত্যাগকারী সৈন্য, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে আশ্রয়দান এবং তাদের ব্যবহূত পোশাক পরিধান করা অথবা তাদের ব্যবহূত চিহ্ন ধারণ করা। ধর্ম সম্পৃক্ত অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে: কোনো উপাসনাস্থলের ক্ষতিসাধন অথবা তাকে কলুষিত করা; উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক আচরণের মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্বক তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা; ধর্মীয় সমাবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা; ব্যক্তিবিশেষের ধর্মকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, সমাধিক্ষেত্র অথবা শ্মশানালয়ে অনধিকার প্রবেশ এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ ধরনের কোনো শব্দ অথবা ধ্বনি উচ্চারণ করা।
অপহরণ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, অসৎ ও বেআইনি ভাবে সম্পত্তি দখল, কোনো মহিলাকে ধর্ষণ, ফৌজদারি পর্যায়ের বিশ্বাস ভঙ্গ প্রভৃতি দন্ড বিধির আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সাথে নরহত্যা পর্যায়ের অন্যান্য অপরাধ, প্রতারণাপূর্ণ ভাবে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত হস্তান্তর দলিল সম্পাদন, গবাদিপশু হত্যা বা পঙ্গু করে দেয়া এবং অন্যের গৃহে অনধিকার প্রবেশের মত অপরাধও শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় পড়ে।
অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী একজন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, জরিমানা এবং বেত্রাঘাতের মত শাস্তি প্রদান করা হয়। দন্ডবিধির আওতায় মৃত্যুদন্ডই হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সেনাবিদ্রোহে মদদ দান, সজ্ঞানে মিথ্যা সাক্ষ্য দান, যার ফলে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত, নরহত্যা, শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ কোনো ব্যক্তি অথবা মাতাল কাউকে আত্মহননে প্ররোচিত করা, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত কোনো ব্যক্তির দ্বারা অন্য কাউকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো, দশ বছরের কম বয়স্ক কাউকে অপহরণ এবং ডাকাতি করতে গিয়ে নরহত্যার মতো অপরাধ সংঘটনকারীর উপর এ মৃত্যুদন্ড আরোপ করা হয়। তবে এসব অপরাধসহ অন্য কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও প্রদান করা হয়। বাদ বাকি অপরাধের জন্য সশ্রম অথবা বিনা শ্রমে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড আরোপ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত কারাদন্ডের পরিবর্তে কেবলমাত্র অর্থদন্ড প্রদান করতে পারেন। কোনো কোনো জঘন্য অপরাধের শাস্তিস্বরূপ আদালত কারাদন্ড সহ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতে পারেন। আবার এমন কিছু অপরাধ আছে, যার দন্ড হিসেবে আদালত দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কোনো আসামীর দন্ড লঘু করে কুড়ি বছরের কম যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে পুরোপুরি ক্ষমা, তার দন্ডাদেশের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত অথবা তাকে লঘুতর কোনো দন্ড প্রদান করতে পারেন।
পোষ্টি যদি প্রয়োজনীয় মনে হয় তাহলে কষ্ট করে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং অন্যজনকে আইন সম্পর্কে জানতে সহায়তা করুন। ধন্যবাদ। (বাংলাদেশ আইনগত অধিকার - একটি অনলাইন ভিক্তিক আইন সেবা পেইজ। যে কোনো আইনি প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে মেসেজ করুন। )

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top