আমরা যারা আইনজীবী (এডভোকেট) তাঁরা আইনপেশায় নিয়োজিত, অন্য কিছু নয় (In the profession of law, not in the business of justice)। এইক্ষেত্রে সাম্প্রতিক এই সিনেমার নাম উল্লেখ্য- "Section 375"।
তো ড. মল্লিকের বইয়ে মি. আর্থার টি ভ্যাণ্ডারবিলের একটি নিবন্ধ আছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি। তাঁর মতে আইনজীবীদের কাজ পাঁচ রকমঃ
(১) তিনি একজন বিচক্ষণ পরামর্শক (Counselor)। যিনি মানুষের জীবন-ঘনিষ্ঠ নানা বিষয়ে নিঃস্বার্থভাবে যথাযথ উপদেশ দিবেন।
(২) তিনি একজন দক্ষ আইনজীবী (Advocate) যিনি কাউকে বিচারের মুখোমুখি দাড় করানো এবং তার আত্মপক্ষ সমর্থন- যে ভূমিকায়ই থাকুন না কেন সেই ক্ষেত্রে সফল। তা বিচারিক বা আপীল যে পর্যায়েই হোক।
(৩) একজন প্রকৃত আইনজীবী একদিকে যেমন একজন ব্যাক্তি, অন্যদিকে আবার তাঁর পেশার বৃহত্তর পরিবারের সদস্য; তাঁর প্রধানতম লক্ষ্য হবে নিজ পেশা, আদালত ও আইনের উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখা।
(৪) তিনি জনমত গঠনে একজন বোদ্ধা (Intelligent) হিসেবে ও নিঃস্বার্থভাবে নেতৃত্ব দিবেন।
(৫) দেশের তথা জনগনের কোন বৃহত্তর স্বার্থে ভূমিকা রাখার ও সেবা করার সুযোগ এলে তাতে সাড়া দেওয়া। উল্লেখ্য, যে আইনজীবীর পেশাগত চিন্তা তাঁর নিজস্ব ক্ল্যায়েন্টকে কেন্দ্র করে শুরু ও শেষ হয় তা কোন মহৎ পেশা হতে পারেনা।
নামজারি কেন জরুরি- সে প্রশ্নের উত্তর জানার আগে সম্ভবত ‘নামজারি’ বলতে আমরা কী বুঝি তা খানিকটা জানা প্রয়োজন। এক কথায় ‘নামজারি’ বলতে-কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।
কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।
কেন নামজারি এত জরুরি তার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি গুরুত্বপূর্ণঃ
শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।
আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, দলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
নামজারি আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা ‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।
নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যামান থাকেনা, পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।
যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
পরিশেষে, উপরোক্ত বিষয়গুলির আলোকে জমির মালিকগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে-যাঁরা এখনও গড়িমসি করে নামজারি সম্পন্ন করেননি তারা অনতিবিলম্বে নামজারির জন্য আবেদন জানান। মনে রাখবেন, এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া, এতে ভয়ের কিছু নেই, যদি আপনি এখানে উদ্ধৃত নিয়মগুলি একটি পড়ে নেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনার-জমি সংশ্লিষ্ট বড় ধরণের আপত্তি কিংবা মামলা-মোকদ্দমা না থাকে তবে নির্ধারিত ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে নামজারির খতিয়ান সৃজন করে দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ি জমির দলিল মোট ৯ প্রকার
(১) সাফ-কবলা দলিল #
(২) দানপত্র দলিল #
(৩) হেবা দলিল #
(৪) হেবা বিল এওয়াজ দলিল #
(৫) এওয়াজ দলিল #
(৬) বন্টন নামা দলিল #
(৭) অছিয়তনামা দলিল #
(৮) উইল দলিল #
(৯) নাদাবি দলিল #
সাফকবালা দলিলঃ
কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফাকবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবালা বলা হয়। এই কবালা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হলেন।
দানপত্র দলিলঃ
যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।
হেবা দলিলঃ
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।
হেবা বিল এওয়াজঃ
এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোন প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে।
এওয়াজ দলিল:
যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে।
এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো+: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।
বন্টনমানা দলিল:
শরিকগণের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।
অছিয়তনামা দলিল:
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের মধ্যে সকলেই হবেন।
উইল দলিল:
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীব কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।
নাদাবী দলিল:
কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলে ।।
Copied
বিভিন্ন প্রকার দলিল
(০১) সাফ কবলা দলিল (Title Deed by Sale);
(০২) বায়া দলিল (Title Deed of Predecessors);
(০৩) পাট্টা (Patta/Grants);
(০৪) কবুলিয়ত (Kobuliyat/Grants);
(০৫) সরকারি মঞ্জুরি পত্র (Government Grant);
(০৬) অসি পত্র (Deed of Trust);
(০৭) ওয়াকফনামা (Deed of Waqf);
(০৮) দেবোত্তর দলিল (Deed of Debottor);
(০৯) দানের ঘোষণা (Declaration of Gift);
(১০) দান পত্র (Deed of Gift);
(১১) ইচ্ছা পত্র (Deed of Will);
(১২) হিবা-বিল-এওয়াজ (Deed of Exchange);
(১৩) বন্ধকনামা (Deed of Mortgage);
(১৪) রেহেন দলিল (Deed of Pledge);
বিঃদ্রঃ- কি ধরণের দলিল আগে জেনে নিন। নতুবা সিদ্ধান্ত নিতে জামেলা পোহাতে হবে। দলিলের ধরণের উপর নির্ভর করে আপনার মোকাদ্দমার আইনগত ভিত্তি কি হতে পারে। কাজেই যে দলিলের ভিতিত্তে মোকাদ্দমা চলবে সেই দলিল বিষয় পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করা আবশ্যক বটে।
=== খতিয়ান /পর্চা ও অন্যান্য ===
(০১) সি.এস. খতিয়ান/পর্চা (Cadestral Survey);
(০২) এস.এ. খতিয়ান/পর্চা (Settlement Attestation);
(০৩) আর.এস. খতিয়ান/পর্চা (Revisional Survey);
(০৪) বি.আর.এস. বা বি.এস. খতিয়ান/পর্চা (Bangladesh Revisional Survey);
(০৫) নাজারি খতিয়ান (Mutation Khatian);
(০৬) খাজনা রশিদ (Rent Receipts);
বিঃদ্রঃ- খতিয়ান বা পর্চা মিলিয়ে নিতে হবে। দলিলে উল্লেখিত পর্চার বিবরণের সাথে মূল পর্চার বিবরণ মিলিয়ে নেয়া আবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দলিলে পর্চার উল্লেখ পূর্বক যে বিবরণ দেয়া হচ্ছে বাস্তবে মূল পর্চার সাথে দালীলিক বিবরণ গরমিল। কাজেই খুব সতর্কতার সাথে দলিল ও পর্চার বা খতিয়ানের বিবরণ মিলাতে হবে।
=== অন্যান্য প্রামানিক দলিল ===
(০১) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং রেকর্ড;
(০২) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ;
(০৩) উপজিলা বা ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং রেকর্ড;
(০৪) উপজিলা বা ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ;
(০৫) ওয়াসা সংযোগ রেকর্ড;
(০৬) ওয়াসা বিল পরিশোধ রশিদ;
(০৭) ইলেকট্রিসিটি সংযোগ রেকর্ড;
(০৮) ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধ রশিদ;
(০৯) গ্যাস সংযোগ রেকর্ড;
(১০) গ্যাস বিল পরিশোধ রশিদ;
বিঃদ্রঃ- এই প্রামানিক দলিল গুলো সরাসরি মালিকানার স্বত্ব প্রমান না করলেও এই সকল রেকর্ডে যেহেতু মূল মালিকের নামেই সংযোগ দেয়া হয়, সেহেতু এগুলোর মাধ্যমে মালিকানার আইনগত অনুমান ভিত্তি আছে।
=== আদালতের রায়-ডিক্রী ও সরকারি আদেশ ===
(০১) বিজ্ঞ নিয়মিত আদালত কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০২) বিজ্ঞ অর্থঋণ আদালত কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৩) বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৪) বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে আপিলেট ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৫) বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৬) বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপিলেট ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৭) ওয়াকফ প্রশাসক কর্তৃক প্রচারিত আদেশ; ইত্যাদি।
বিঃদ্রঃ- আদালতের আদেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে এবং রায় ও ডিক্রিতে প্রচারিত পক্ষদের নাম ও পরিচয় এবং ভূমি তফসিল মিলিয়ে নিতে হবে।
কেন করবেন, কিভাবে করবেন ধরুন, বাবা-মার মৃত্যুর পর আপনারা ভাইবোনেরা নিজেদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চান। সাধারণত আমাদের দেশে এ রকম ক্ষেত্রে মৌখিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করেই অংশীদাররা সম্পত্তি ভোগ করে থাকেন। কিন্তু এর ফলে ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাটোয়ারা দলিল সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এই জটিলতা কমিয়ে আনা যায়। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের ২(১৫) ধারায় বণ্টন দলিল সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'বণ্টন দলিল' অর্থ এমন কোনো দলিল যার মাধ্যমে কোনো সম্পত্তির সহ-মালিকগণ কোনো নির্দিষ্ট সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয় বা নিতে সম্মত হয়। উল্লেখ্য, বণ্টন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো রাজস্ব কর্তৃপক্ষ অথবা কোনো দেওয়ানি আদালত প্রদত্ত কোনো চূড়ান্ত আদেশ এবং কোনো সালিশকারী কর্তৃক প্রদত্ত বণ্টন-নির্দেশ রোয়েদাদও 'বণ্টক দলিল'-এর অন্তর্ভুক্ত। বাটোয়ারা দলিল কখন? যৌথ পরিবারে ক্রয় করা সম্পত্তি ভোগদখলের সুবিধার্থে দখল অনুযায়ী বণ্টন করা যেতে পারে। আবার একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক একাধিক দলিল দ্বারা ক্রয়সূত্রে অর্জিত অবিভক্ত সম্পত্তি অথবা অন্য যে কোনোভাবে অর্জিত সম্পত্তি বণ্টন দলিলের মাধ্যমে বণ্টন করা যাবে। যৌথ মালিকানায় কেনা সম্পত্তিও ভোগদখলের সুবিধার্থে যে কোনো সময় আপস-বণ্টন করা যায়। যৌথ সম্পত্তির পক্ষ যতজন থাকবেন, সম্পত্তি তত ভাগ করার পর প্রত্যেক পক্ষ আলাদা আলাদাভাবে সম্পত্তি বাটোয়ারা বা বণ্টন করে নিতে পারবেন। আবার যৌথভাবে ভোগদখলরত অবস্থায় সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে যে কোনো একজন মালিক ইচ্ছা করলে তার নিজের সম্পত্তিটুকু বণ্টন করে নিতে পারেন। অন্যপক্ষরা একসঙ্গে ভোগদখল করার ইচ্ছা করলে যিনি বণ্টনক্রমে আলাদা হতে চান, তার ভাগ বাদ দিয়ে অপরাপর অংশীদাররা যৌথভাবে সম্পত্তি ভোগদখল করতে পারবেন। লিখিত চুক্তি বা বণ্টন দলিল ছাড়াও আদালত এবং সালিশি রোয়েদাদের মাধ্যমেও বাটোয়ারা কাজ নিষ্পন্ন হতে পারে। বাটোয়ারা দলিল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করা এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭(১) ধারা সংশোধন করে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। স্ট্যাম্প ফি দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগ পর্যন্ত উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন পক্ষদের ইচ্ছাধীন ছিল। বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সরকার এই দলিলের ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতোপূর্বে বণ্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি কবলা দলিলের সমপরিমাণ ছিল। এত উচ্চহারের ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক পরিশোধ করতে হয় বলে বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রেশনের পক্ষগণ তা নিবন্ধন করতে চাইত না। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের তফসিল-১ এর ৪৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বণ্টননামা দলিলে স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়। ওই অনুচ্ছেদ মোতাবেক বণ্টননামা দলিলের স্ট্যাম্প শুল্ক মূল্য নির্বিশেষে বর্তমানে মাত্র বিশ টাকা। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ১৪২ আদেশ অনুযায়ী বণ্টননামার সঙ্গে হলফনামাও সংযুক্ত করতে হয়। হলফনামার স্ট্যাম্প শুল্ক বর্তমানে পঞ্চাশ টাকা এবং শপথনামার রেজিস্ট্রেশন ফি বর্তমানে ১০০ টাকা। এছাড়া কোনো দলিলের পৃষ্ঠা বেশি হলে বর্ধিত প্রতি পাতা পঁচিশ টাকা হারে ফিস বাড়তে পারে। নিবন্ধন ফি বণ্টননামা বা বাটোয়ারা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নরূপ_ (ক) সম্পত্তির মূল্য অনূর্ধ্ব তিন লাখ টাকা হলে- ফি ৫০০ টাকা। (খ) সম্পত্তির মূল্য তিন লাখ টাকার বেশি কিন্তু দশ লাখ টাকার কম হলে- ৭০০ টাকা। (গ) সম্পত্তির মূল্য দশ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ত্রিশ লাখ টাকার কম হলে_ ১২০০ টাকা। (ঘ) সম্পত্তির মূল্য ত্রিশ লাখ টাকার বেশি কিন্তু পঞ্চাশ লাখ টাকার কম হলে_ ১৮০০ টাকা। (ঙ) সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশি হলে_ ফি গুনতে হবে ২০০০ টাকা। বণ্টনের পর অংশীদারদের কর্তব্য বণ্টননামা অনুযায়ী সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশের টাইটেলসংক্রান্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্টপক্ষ নিজের কাছে সযত্নে রাখবেন। যদি প্রত্যেক পক্ষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দলিল না থাকে তবে ফটোকপি সংরক্ষণ করতে হবে। যে পক্ষের কাছে মূল দলিল থাকবে তিনি অপর পক্ষের প্রয়োজনে তা সরবরাহ করবেন। এই বিষয়গুলো সম্পর্কেও বণ্টননামা দলিলে লিখিত বিধান থাকা উচিত। বণ্টননামায় উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো যৌথ সম্পত্তির পক্ষবৃন্দ টাইটেল অর্থাৎ কিভাবে সম্পত্তি পেলেন সে সম্পর্কে বাটোয়ারা দলিলে রিসাইটেল বা বর্ণনা থাকা উচিত। সম্পত্তি বণ্টন করার ইচ্ছা এবং পক্ষদের অংশ, অবিভক্ত সম্পত্তি কিভাবে বিভক্ত করা হলো ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে। বণ্টননামা দলিলের মূলকপি কার কাছে থাকবে সেটি দলিলে উল্লেখ করতে হয়। দলিলে যত পক্ষ থাকেন, ঠিক ততগুলো প্রতিলিপি নিবন্ধন করে নেয়া যায়। এই প্রতিলিপির স্ট্যাম্প বাবদ ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে খরচ পড়বে পঞ্চাশ টাকা থেকে একশত টাকা মাত্র। প্রতিলিপি দলিল দিয়ে প্রত্যেক পক্ষ মূল দলিলের মতোই কাজ করতে পারেন। কখনো কখনো পক্ষদের মধ্যে বণ্টনের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোনো পক্ষকে নগদ টাকা প্রদান করতে হয়। এই টাকা প্রদানের বিষয়টি দলিলে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা উচিত। উল্লেখ্য, এরকম নগদ লেনদেনের জন্য বণ্টননামা দলিলে আলাদা ফি বা স্ট্যাম্প দিতে হয় না। সব পক্ষের অংশগ্রহণ অপরিহার্য বণ্টননামার সব পক্ষকেই দলিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। কোনো পক্ষ নাবালক থাকলে তার পক্ষে যথাযথ অভিভাবক পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারেন। তবে নাবালক সাবালকত্ব অর্জন করার পর অভিভাবকের সিদ্ধান্ত না মানতে চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন। অংশীদারদের মধ্যে সমঝোতা না হলে সালিশ আদালতের মধ্যদিয়ে তার নিষ্পত্তি করতে হয়। আদালতে এ জন্য যে মামলা করতে হয়, সেটি 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। সম্পত্তি বণ্টনের মামলা করবেন কিভাবে? সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিবাদ-বিসংবাদ একটি সনাতন ব্যাপার। উত্তরাধিকার সম্পত্তি কিংবা যৌথ সম্পত্তিতে সহ-অংশীদারদের মালিকানা নির্ণয়ে নানা রকম আইনি জটিলতা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। বাটোয়ারা দলিলের মধ্য দিয়ে অংশীদাররা শুরুতে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব না হলে আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করার বিকল্প থাকে না। দৃশ্যপট-১ ফারহানারা তিন ভাই ও চার বোন। মা বেঁচে আছেন। তার বাবার মৃত্যুর সময় প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদ ও সম্পত্তি রেখে গেছেন ওয়ারিশদের জন্য। কিন্তু সম্পত্তি এখন পর্যন্ত ভাগ হয়নি। ফারহানার দুই ভাই জোর করে বেশি সম্পত্তি ভোগ করছেন। আবার তার এক ভগ্নিপতি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেও বেশ কিছু সম্পত্তি ভোগ করছেন। এর মধ্য দিয়ে বিপদে আছে ফারহানা, তার মা আর তিন বোন। তার দুই ভাই ও ছোট ভগ্নিপতি সম্পত্তি ভাগ করতে দিতে চান না। এত এত সম্পত্তি থাকার পরও ফারহানারা মারাত্মক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এতদিন যাবত সম্পত্তির দলিলপত্র ফারহানার মায়ের কাছে ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে তার ভাইয়ের ছেলে ও ছোট ভগ্নিপতি সম্পত্তির সব দলিল ফারহানার বুকে ছুরি ঠেকিয়ে লকার ভেঙে নিয়ে গেছে। যখনই তাদের পক্ষ থেকে সম্পত্তি ভাগ করতে চাওয়া হয়, তখনই তার দুই ভাই ও ছোট ভগ্নিপতি তাদের ভয়-ভীতি দেখায়। মা আর তিন বোন নিয়ে ফারহানা বেশ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দৃশ্যপট-২ সাদিয়ারা পাঁচ ভাই বোন। দুই ভাই তিন বোন। তার বাবা মৃত্যুর সময় প্রায় ১০০ বিঘা সম্পত্তি রেখে গেছেন। কিন্তু সেই সম্পত্তির কোনো অংশেই সাদিয়াদের তিন বোনের কোনো অংশ দেয়া হয়নি। দুই ভাই জবরদস্তিমূলকভাবে সকল জমি নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভোগদখল করে আসছে। সাদিয়ারা সম্পত্তিতে অংশ চাইলে ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে প্রচ- প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাদিয়াদের বিয়ের সময় প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছে বলে তাদের কোনো সম্পত্তি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে বহু চাপাচাপির পর ভাইয়েরা একটি বাটোয়ারা দলিল করে বোনদের নামমাত্র কিছু সম্পত্তি দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে চায়। কিন্তু সাদিয়ারা সেই বণ্টনে সম্মতি দেয় না। এখন সাদিয়ারা কী করতে পারে? বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিয়ে এরকম বিবাদ-বিসংবাদ অহরহ ঘটে থাকে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সম্পত্তির বৈধ হকদার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দাখিল করে সম্পত্তির অংশ বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় বিজ্ঞ আদালত ইসলামি শরিয়া ও ফারায়েজ আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করে দেন। 'বাটোয়ারা মামলা' কী? ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে 'বণ্টন'। স্থানীয় বা পারিবারিকভাবে বণ্টনের আইনগত ভিত্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করে নিলে জটিলতা অনেক কমে। এ জন্য সব শরিককে এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা 'বণ্টন মোকদ্দমা' বা 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে 'পার্টিশন স্যুট' বলা হয়। সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের_ উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এবং খরিদ সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বাটোয়ারা মামলা করার সময় সকল অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবে না। যদি অংশীদাররা আপস মতে বণ্টন করতে রাজি না হন, সে ক্ষেত্রে যে কোনো অংশীদার বণ্টনের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় কী কী প্রয়োজন? প্রথমেই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে। মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়। বণ্টনের শর্তাবলি বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত। যেমন_ সম্পত্তি পরিমাপ করে অংশীদারদের জমির সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং বণ্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে; তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে; বণ্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে; প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকদের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত হতে হবে; যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে; সহ-অংশীদাররা আপস বণ্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায়। বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সব সহ-শরিকের মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে। এ ধরনের মামলায় দুইবার দুটি ডিক্রি হয়, যার প্রথমটির নাম প্রাথমিক ডিক্রি আর পরেরটার নাম চূড়ান্ত ডিক্রি। প্রাথমিক ডিক্রিতে হিস্যা অনুযায়ী বণ্টনের আদেশ দেয়া হয়। আর চূড়ান্ত ডিক্রিতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরেজমিনে সম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পিলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রি প্রচার করা হয়। আদালত প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রিপ্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। বণ্টন হওয়ার পর করণীয় আদালতের মাধ্যমে বণ্টন হওয়ার পর এবং বণ্টন দলিল রেজিস্ট্রি করার পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারি, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনাও প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নামজারি হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা। বণ্টনের পরও দখল না পেলে আদালত থেকে বাটোয়ারা মামলার ডিক্রি পাওয়ার পরও সেই মোতাবেক দখল বুঝিয়ে দেয়া না হলে 'উচ্ছেদের মামলা' করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অংশীদারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।
নামজারি কেন জরুরি- সে প্রশ্নের উত্তর জানার আগে সম্ভবত ‘নামজারি’ বলতে আমরা কী বুঝি তা খানিকটা জানা প্রয়োজন। এক কথায় ‘নামজারি’ বলতে-কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।
কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।
কেন নামজারি এত জরুরি তার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি গুরুত্বপূর্ণঃ
শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।
আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, দলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
নামজারি আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা ‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।
নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যামান থাকেনা, পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।
যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
পরিশেষে, উপরোক্ত বিষয়গুলির আলোকে জমির মালিকগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে-যাঁরা এখনও গড়িমসি করে নামজারি সম্পন্ন করেননি তারা অনতিবিলম্বে নামজারির জন্য আবেদন জানান। মনে রাখবেন, এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া, এতে ভয়ের কিছু নেই, যদি আপনি এখানে উদ্ধৃত নিয়মগুলি একটি পড়ে নেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনার-জমি সংশ্লিষ্ট বড় ধরণের আপত্তি কিংবা মামলা-মোকদ্দমা না থাকে তবে নির্ধারিত ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে নামজারির খতিয়ান সৃজন করে দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ি জমির দলিল মোট ৯ প্রকার
(১) সাফ-কবলা দলিল #
(২) দানপত্র দলিল #
(৩) হেবা দলিল #
(৪) হেবা বিল এওয়াজ দলিল #
(৫) এওয়াজ দলিল #
(৬) বন্টন নামা দলিল #
(৭) অছিয়তনামা দলিল #
(৮) উইল দলিল #
(৯) নাদাবি দলিল #
সাফকবালা দলিলঃ
কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফাকবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবালা বলা হয়। এই কবালা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হলেন।
দানপত্র দলিলঃ
যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।
হেবা দলিলঃ
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।
হেবা বিল এওয়াজঃ
এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোন প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে।
এওয়াজ দলিল:
যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে।
এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো+: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।
বন্টনমানা দলিল:
শরিকগণের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।
অছিয়তনামা দলিল:
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের মধ্যে সকলেই হবেন।
উইল দলিল:
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীব কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।
নাদাবী দলিল:
কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলে ।।
Copied
বিভিন্ন প্রকার দলিল
(০১) সাফ কবলা দলিল (Title Deed by Sale);
(০২) বায়া দলিল (Title Deed of Predecessors);
(০৩) পাট্টা (Patta/Grants);
(০৪) কবুলিয়ত (Kobuliyat/Grants);
(০৫) সরকারি মঞ্জুরি পত্র (Government Grant);
(০৬) অসি পত্র (Deed of Trust);
(০৭) ওয়াকফনামা (Deed of Waqf);
(০৮) দেবোত্তর দলিল (Deed of Debottor);
(০৯) দানের ঘোষণা (Declaration of Gift);
(১০) দান পত্র (Deed of Gift);
(১১) ইচ্ছা পত্র (Deed of Will);
(১২) হিবা-বিল-এওয়াজ (Deed of Exchange);
(১৩) বন্ধকনামা (Deed of Mortgage);
(১৪) রেহেন দলিল (Deed of Pledge);
বিঃদ্রঃ- কি ধরণের দলিল আগে জেনে নিন। নতুবা সিদ্ধান্ত নিতে জামেলা পোহাতে হবে। দলিলের ধরণের উপর নির্ভর করে আপনার মোকাদ্দমার আইনগত ভিত্তি কি হতে পারে। কাজেই যে দলিলের ভিতিত্তে মোকাদ্দমা চলবে সেই দলিল বিষয় পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করা আবশ্যক বটে।
=== খতিয়ান /পর্চা ও অন্যান্য ===
(০১) সি.এস. খতিয়ান/পর্চা (Cadestral Survey);
(০২) এস.এ. খতিয়ান/পর্চা (Settlement Attestation);
(০৩) আর.এস. খতিয়ান/পর্চা (Revisional Survey);
(০৪) বি.আর.এস. বা বি.এস. খতিয়ান/পর্চা (Bangladesh Revisional Survey);
(০৫) নাজারি খতিয়ান (Mutation Khatian);
(০৬) খাজনা রশিদ (Rent Receipts);
বিঃদ্রঃ- খতিয়ান বা পর্চা মিলিয়ে নিতে হবে। দলিলে উল্লেখিত পর্চার বিবরণের সাথে মূল পর্চার বিবরণ মিলিয়ে নেয়া আবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দলিলে পর্চার উল্লেখ পূর্বক যে বিবরণ দেয়া হচ্ছে বাস্তবে মূল পর্চার সাথে দালীলিক বিবরণ গরমিল। কাজেই খুব সতর্কতার সাথে দলিল ও পর্চার বা খতিয়ানের বিবরণ মিলাতে হবে।
=== অন্যান্য প্রামানিক দলিল ===
(০১) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং রেকর্ড;
(০২) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ;
(০৩) উপজিলা বা ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং রেকর্ড;
(০৪) উপজিলা বা ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ;
(০৫) ওয়াসা সংযোগ রেকর্ড;
(০৬) ওয়াসা বিল পরিশোধ রশিদ;
(০৭) ইলেকট্রিসিটি সংযোগ রেকর্ড;
(০৮) ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধ রশিদ;
(০৯) গ্যাস সংযোগ রেকর্ড;
(১০) গ্যাস বিল পরিশোধ রশিদ;
বিঃদ্রঃ- এই প্রামানিক দলিল গুলো সরাসরি মালিকানার স্বত্ব প্রমান না করলেও এই সকল রেকর্ডে যেহেতু মূল মালিকের নামেই সংযোগ দেয়া হয়, সেহেতু এগুলোর মাধ্যমে মালিকানার আইনগত অনুমান ভিত্তি আছে।
=== আদালতের রায়-ডিক্রী ও সরকারি আদেশ ===
(০১) বিজ্ঞ নিয়মিত আদালত কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০২) বিজ্ঞ অর্থঋণ আদালত কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৩) বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৪) বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে আপিলেট ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৫) বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৬) বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপিলেট ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৭) ওয়াকফ প্রশাসক কর্তৃক প্রচারিত আদেশ; ইত্যাদি।
বিঃদ্রঃ- আদালতের আদেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে এবং রায় ও ডিক্রিতে প্রচারিত পক্ষদের নাম ও পরিচয় এবং ভূমি তফসিল মিলিয়ে নিতে হবে।
কেন করবেন, কিভাবে করবেন ধরুন, বাবা-মার মৃত্যুর পর আপনারা ভাইবোনেরা নিজেদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চান। সাধারণত আমাদের দেশে এ রকম ক্ষেত্রে মৌখিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করেই অংশীদাররা সম্পত্তি ভোগ করে থাকেন। কিন্তু এর ফলে ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাটোয়ারা দলিল সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এই জটিলতা কমিয়ে আনা যায়। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের ২(১৫) ধারায় বণ্টন দলিল সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'বণ্টন দলিল' অর্থ এমন কোনো দলিল যার মাধ্যমে কোনো সম্পত্তির সহ-মালিকগণ কোনো নির্দিষ্ট সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয় বা নিতে সম্মত হয়। উল্লেখ্য, বণ্টন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো রাজস্ব কর্তৃপক্ষ অথবা কোনো দেওয়ানি আদালত প্রদত্ত কোনো চূড়ান্ত আদেশ এবং কোনো সালিশকারী কর্তৃক প্রদত্ত বণ্টন-নির্দেশ রোয়েদাদও 'বণ্টক দলিল'-এর অন্তর্ভুক্ত। বাটোয়ারা দলিল কখন? যৌথ পরিবারে ক্রয় করা সম্পত্তি ভোগদখলের সুবিধার্থে দখল অনুযায়ী বণ্টন করা যেতে পারে। আবার একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক একাধিক দলিল দ্বারা ক্রয়সূত্রে অর্জিত অবিভক্ত সম্পত্তি অথবা অন্য যে কোনোভাবে অর্জিত সম্পত্তি বণ্টন দলিলের মাধ্যমে বণ্টন করা যাবে। যৌথ মালিকানায় কেনা সম্পত্তিও ভোগদখলের সুবিধার্থে যে কোনো সময় আপস-বণ্টন করা যায়। যৌথ সম্পত্তির পক্ষ যতজন থাকবেন, সম্পত্তি তত ভাগ করার পর প্রত্যেক পক্ষ আলাদা আলাদাভাবে সম্পত্তি বাটোয়ারা বা বণ্টন করে নিতে পারবেন। আবার যৌথভাবে ভোগদখলরত অবস্থায় সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে যে কোনো একজন মালিক ইচ্ছা করলে তার নিজের সম্পত্তিটুকু বণ্টন করে নিতে পারেন। অন্যপক্ষরা একসঙ্গে ভোগদখল করার ইচ্ছা করলে যিনি বণ্টনক্রমে আলাদা হতে চান, তার ভাগ বাদ দিয়ে অপরাপর অংশীদাররা যৌথভাবে সম্পত্তি ভোগদখল করতে পারবেন। লিখিত চুক্তি বা বণ্টন দলিল ছাড়াও আদালত এবং সালিশি রোয়েদাদের মাধ্যমেও বাটোয়ারা কাজ নিষ্পন্ন হতে পারে। বাটোয়ারা দলিল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করা এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭(১) ধারা সংশোধন করে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। স্ট্যাম্প ফি দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগ পর্যন্ত উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন পক্ষদের ইচ্ছাধীন ছিল। বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সরকার এই দলিলের ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতোপূর্বে বণ্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি কবলা দলিলের সমপরিমাণ ছিল। এত উচ্চহারের ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক পরিশোধ করতে হয় বলে বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রেশনের পক্ষগণ তা নিবন্ধন করতে চাইত না। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের তফসিল-১ এর ৪৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বণ্টননামা দলিলে স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়। ওই অনুচ্ছেদ মোতাবেক বণ্টননামা দলিলের স্ট্যাম্প শুল্ক মূল্য নির্বিশেষে বর্তমানে মাত্র বিশ টাকা। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ১৪২ আদেশ অনুযায়ী বণ্টননামার সঙ্গে হলফনামাও সংযুক্ত করতে হয়। হলফনামার স্ট্যাম্প শুল্ক বর্তমানে পঞ্চাশ টাকা এবং শপথনামার রেজিস্ট্রেশন ফি বর্তমানে ১০০ টাকা। এছাড়া কোনো দলিলের পৃষ্ঠা বেশি হলে বর্ধিত প্রতি পাতা পঁচিশ টাকা হারে ফিস বাড়তে পারে। নিবন্ধন ফি বণ্টননামা বা বাটোয়ারা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নরূপ_ (ক) সম্পত্তির মূল্য অনূর্ধ্ব তিন লাখ টাকা হলে- ফি ৫০০ টাকা। (খ) সম্পত্তির মূল্য তিন লাখ টাকার বেশি কিন্তু দশ লাখ টাকার কম হলে- ৭০০ টাকা। (গ) সম্পত্তির মূল্য দশ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ত্রিশ লাখ টাকার কম হলে_ ১২০০ টাকা। (ঘ) সম্পত্তির মূল্য ত্রিশ লাখ টাকার বেশি কিন্তু পঞ্চাশ লাখ টাকার কম হলে_ ১৮০০ টাকা। (ঙ) সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশি হলে_ ফি গুনতে হবে ২০০০ টাকা। বণ্টনের পর অংশীদারদের কর্তব্য বণ্টননামা অনুযায়ী সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশের টাইটেলসংক্রান্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্টপক্ষ নিজের কাছে সযত্নে রাখবেন। যদি প্রত্যেক পক্ষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দলিল না থাকে তবে ফটোকপি সংরক্ষণ করতে হবে। যে পক্ষের কাছে মূল দলিল থাকবে তিনি অপর পক্ষের প্রয়োজনে তা সরবরাহ করবেন। এই বিষয়গুলো সম্পর্কেও বণ্টননামা দলিলে লিখিত বিধান থাকা উচিত। বণ্টননামায় উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো যৌথ সম্পত্তির পক্ষবৃন্দ টাইটেল অর্থাৎ কিভাবে সম্পত্তি পেলেন সে সম্পর্কে বাটোয়ারা দলিলে রিসাইটেল বা বর্ণনা থাকা উচিত। সম্পত্তি বণ্টন করার ইচ্ছা এবং পক্ষদের অংশ, অবিভক্ত সম্পত্তি কিভাবে বিভক্ত করা হলো ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে। বণ্টননামা দলিলের মূলকপি কার কাছে থাকবে সেটি দলিলে উল্লেখ করতে হয়। দলিলে যত পক্ষ থাকেন, ঠিক ততগুলো প্রতিলিপি নিবন্ধন করে নেয়া যায়। এই প্রতিলিপির স্ট্যাম্প বাবদ ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে খরচ পড়বে পঞ্চাশ টাকা থেকে একশত টাকা মাত্র। প্রতিলিপি দলিল দিয়ে প্রত্যেক পক্ষ মূল দলিলের মতোই কাজ করতে পারেন। কখনো কখনো পক্ষদের মধ্যে বণ্টনের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোনো পক্ষকে নগদ টাকা প্রদান করতে হয়। এই টাকা প্রদানের বিষয়টি দলিলে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা উচিত। উল্লেখ্য, এরকম নগদ লেনদেনের জন্য বণ্টননামা দলিলে আলাদা ফি বা স্ট্যাম্প দিতে হয় না। সব পক্ষের অংশগ্রহণ অপরিহার্য বণ্টননামার সব পক্ষকেই দলিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। কোনো পক্ষ নাবালক থাকলে তার পক্ষে যথাযথ অভিভাবক পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারেন। তবে নাবালক সাবালকত্ব অর্জন করার পর অভিভাবকের সিদ্ধান্ত না মানতে চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন। অংশীদারদের মধ্যে সমঝোতা না হলে সালিশ আদালতের মধ্যদিয়ে তার নিষ্পত্তি করতে হয়। আদালতে এ জন্য যে মামলা করতে হয়, সেটি 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। সম্পত্তি বণ্টনের মামলা করবেন কিভাবে? সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিবাদ-বিসংবাদ একটি সনাতন ব্যাপার। উত্তরাধিকার সম্পত্তি কিংবা যৌথ সম্পত্তিতে সহ-অংশীদারদের মালিকানা নির্ণয়ে নানা রকম আইনি জটিলতা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। বাটোয়ারা দলিলের মধ্য দিয়ে অংশীদাররা শুরুতে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব না হলে আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করার বিকল্প থাকে না। দৃশ্যপট-১ ফারহানারা তিন ভাই ও চার বোন। মা বেঁচে আছেন। তার বাবার মৃত্যুর সময় প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদ ও সম্পত্তি রেখে গেছেন ওয়ারিশদের জন্য। কিন্তু সম্পত্তি এখন পর্যন্ত ভাগ হয়নি। ফারহানার দুই ভাই জোর করে বেশি সম্পত্তি ভোগ করছেন। আবার তার এক ভগ্নিপতি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেও বেশ কিছু সম্পত্তি ভোগ করছেন। এর মধ্য দিয়ে বিপদে আছে ফারহানা, তার মা আর তিন বোন। তার দুই ভাই ও ছোট ভগ্নিপতি সম্পত্তি ভাগ করতে দিতে চান না। এত এত সম্পত্তি থাকার পরও ফারহানারা মারাত্মক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এতদিন যাবত সম্পত্তির দলিলপত্র ফারহানার মায়ের কাছে ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে তার ভাইয়ের ছেলে ও ছোট ভগ্নিপতি সম্পত্তির সব দলিল ফারহানার বুকে ছুরি ঠেকিয়ে লকার ভেঙে নিয়ে গেছে। যখনই তাদের পক্ষ থেকে সম্পত্তি ভাগ করতে চাওয়া হয়, তখনই তার দুই ভাই ও ছোট ভগ্নিপতি তাদের ভয়-ভীতি দেখায়। মা আর তিন বোন নিয়ে ফারহানা বেশ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দৃশ্যপট-২ সাদিয়ারা পাঁচ ভাই বোন। দুই ভাই তিন বোন। তার বাবা মৃত্যুর সময় প্রায় ১০০ বিঘা সম্পত্তি রেখে গেছেন। কিন্তু সেই সম্পত্তির কোনো অংশেই সাদিয়াদের তিন বোনের কোনো অংশ দেয়া হয়নি। দুই ভাই জবরদস্তিমূলকভাবে সকল জমি নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভোগদখল করে আসছে। সাদিয়ারা সম্পত্তিতে অংশ চাইলে ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে প্রচ- প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাদিয়াদের বিয়ের সময় প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছে বলে তাদের কোনো সম্পত্তি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে বহু চাপাচাপির পর ভাইয়েরা একটি বাটোয়ারা দলিল করে বোনদের নামমাত্র কিছু সম্পত্তি দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে চায়। কিন্তু সাদিয়ারা সেই বণ্টনে সম্মতি দেয় না। এখন সাদিয়ারা কী করতে পারে? বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিয়ে এরকম বিবাদ-বিসংবাদ অহরহ ঘটে থাকে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সম্পত্তির বৈধ হকদার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দাখিল করে সম্পত্তির অংশ বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় বিজ্ঞ আদালত ইসলামি শরিয়া ও ফারায়েজ আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করে দেন। 'বাটোয়ারা মামলা' কী? ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে 'বণ্টন'। স্থানীয় বা পারিবারিকভাবে বণ্টনের আইনগত ভিত্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করে নিলে জটিলতা অনেক কমে। এ জন্য সব শরিককে এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা 'বণ্টন মোকদ্দমা' বা 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে 'পার্টিশন স্যুট' বলা হয়। সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের_ উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এবং খরিদ সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বাটোয়ারা মামলা করার সময় সকল অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবে না। যদি অংশীদাররা আপস মতে বণ্টন করতে রাজি না হন, সে ক্ষেত্রে যে কোনো অংশীদার বণ্টনের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় কী কী প্রয়োজন? প্রথমেই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে। মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়। বণ্টনের শর্তাবলি বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত। যেমন_ সম্পত্তি পরিমাপ করে অংশীদারদের জমির সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং বণ্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে; তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে; বণ্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে; প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকদের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত হতে হবে; যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে; সহ-অংশীদাররা আপস বণ্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায়। বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সব সহ-শরিকের মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে। এ ধরনের মামলায় দুইবার দুটি ডিক্রি হয়, যার প্রথমটির নাম প্রাথমিক ডিক্রি আর পরেরটার নাম চূড়ান্ত ডিক্রি। প্রাথমিক ডিক্রিতে হিস্যা অনুযায়ী বণ্টনের আদেশ দেয়া হয়। আর চূড়ান্ত ডিক্রিতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরেজমিনে সম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পিলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রি প্রচার করা হয়। আদালত প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রিপ্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। বণ্টন হওয়ার পর করণীয় আদালতের মাধ্যমে বণ্টন হওয়ার পর এবং বণ্টন দলিল রেজিস্ট্রি করার পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারি, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনাও প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নামজারি হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা। বণ্টনের পরও দখল না পেলে আদালত থেকে বাটোয়ারা মামলার ডিক্রি পাওয়ার পরও সেই মোতাবেক দখল বুঝিয়ে দেয়া না হলে 'উচ্ছেদের মামলা' করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অংশীদারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।
নামজারি কেন জরুরি- সে প্রশ্নের উত্তর জানার আগে সম্ভবত ‘নামজারি’ বলতে আমরা কী বুঝি তা খানিকটা জানা প্রয়োজন। এক কথায় ‘নামজারি’ বলতে-কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।
কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।
কেন নামজারি এত জরুরি তার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি গুরুত্বপূর্ণঃ
শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।
আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, দলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
নামজারি আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা ‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।
নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যামান থাকেনা, পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।
যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
পরিশেষে, উপরোক্ত বিষয়গুলির আলোকে জমির মালিকগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে-যাঁরা এখনও গড়িমসি করে নামজারি সম্পন্ন করেননি তারা অনতিবিলম্বে নামজারির জন্য আবেদন জানান। মনে রাখবেন, এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া, এতে ভয়ের কিছু নেই, যদি আপনি এখানে উদ্ধৃত নিয়মগুলি একটি পড়ে নেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনার-জমি সংশ্লিষ্ট বড় ধরণের আপত্তি কিংবা মামলা-মোকদ্দমা না থাকে তবে নির্ধারিত ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে নামজারির খতিয়ান সৃজন করে দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ি জমির দলিল মোট ৯ প্রকার
(১) সাফ-কবলা দলিল #
(২) দানপত্র দলিল #
(৩) হেবা দলিল #
(৪) হেবা বিল এওয়াজ দলিল #
(৫) এওয়াজ দলিল #
(৬) বন্টন নামা দলিল #
(৭) অছিয়তনামা দলিল #
(৮) উইল দলিল #
(৯) নাদাবি দলিল #
সাফকবালা দলিলঃ
কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফাকবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবালা বলা হয়। এই কবালা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হলেন।
দানপত্র দলিলঃ
যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।
হেবা দলিলঃ
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।
হেবা বিল এওয়াজঃ
এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোন প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে।
এওয়াজ দলিল:
যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে।
এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো+: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।
বন্টনমানা দলিল:
শরিকগণের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।
অছিয়তনামা দলিল:
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের মধ্যে সকলেই হবেন।
উইল দলিল:
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীব কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।
নাদাবী দলিল:
কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলে ।।
Copied
বিভিন্ন প্রকার দলিল
(০১) সাফ কবলা দলিল (Title Deed by Sale);
(০২) বায়া দলিল (Title Deed of Predecessors);
(০৩) পাট্টা (Patta/Grants);
(০৪) কবুলিয়ত (Kobuliyat/Grants);
(০৫) সরকারি মঞ্জুরি পত্র (Government Grant);
(০৬) অসি পত্র (Deed of Trust);
(০৭) ওয়াকফনামা (Deed of Waqf);
(০৮) দেবোত্তর দলিল (Deed of Debottor);
(০৯) দানের ঘোষণা (Declaration of Gift);
(১০) দান পত্র (Deed of Gift);
(১১) ইচ্ছা পত্র (Deed of Will);
(১২) হিবা-বিল-এওয়াজ (Deed of Exchange);
(১৩) বন্ধকনামা (Deed of Mortgage);
(১৪) রেহেন দলিল (Deed of Pledge);
বিঃদ্রঃ- কি ধরণের দলিল আগে জেনে নিন। নতুবা সিদ্ধান্ত নিতে জামেলা পোহাতে হবে। দলিলের ধরণের উপর নির্ভর করে আপনার মোকাদ্দমার আইনগত ভিত্তি কি হতে পারে। কাজেই যে দলিলের ভিতিত্তে মোকাদ্দমা চলবে সেই দলিল বিষয় পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করা আবশ্যক বটে।
=== খতিয়ান /পর্চা ও অন্যান্য ===
(০১) সি.এস. খতিয়ান/পর্চা (Cadestral Survey);
(০২) এস.এ. খতিয়ান/পর্চা (Settlement Attestation);
(০৩) আর.এস. খতিয়ান/পর্চা (Revisional Survey);
(০৪) বি.আর.এস. বা বি.এস. খতিয়ান/পর্চা (Bangladesh Revisional Survey);
(০৫) নাজারি খতিয়ান (Mutation Khatian);
(০৬) খাজনা রশিদ (Rent Receipts);
বিঃদ্রঃ- খতিয়ান বা পর্চা মিলিয়ে নিতে হবে। দলিলে উল্লেখিত পর্চার বিবরণের সাথে মূল পর্চার বিবরণ মিলিয়ে নেয়া আবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দলিলে পর্চার উল্লেখ পূর্বক যে বিবরণ দেয়া হচ্ছে বাস্তবে মূল পর্চার সাথে দালীলিক বিবরণ গরমিল। কাজেই খুব সতর্কতার সাথে দলিল ও পর্চার বা খতিয়ানের বিবরণ মিলাতে হবে।
=== অন্যান্য প্রামানিক দলিল ===
(০১) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং রেকর্ড;
(০২) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ;
(০৩) উপজিলা বা ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং রেকর্ড;
(০৪) উপজিলা বা ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ;
(০৫) ওয়াসা সংযোগ রেকর্ড;
(০৬) ওয়াসা বিল পরিশোধ রশিদ;
(০৭) ইলেকট্রিসিটি সংযোগ রেকর্ড;
(০৮) ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধ রশিদ;
(০৯) গ্যাস সংযোগ রেকর্ড;
(১০) গ্যাস বিল পরিশোধ রশিদ;
বিঃদ্রঃ- এই প্রামানিক দলিল গুলো সরাসরি মালিকানার স্বত্ব প্রমান না করলেও এই সকল রেকর্ডে যেহেতু মূল মালিকের নামেই সংযোগ দেয়া হয়, সেহেতু এগুলোর মাধ্যমে মালিকানার আইনগত অনুমান ভিত্তি আছে।
=== আদালতের রায়-ডিক্রী ও সরকারি আদেশ ===
(০১) বিজ্ঞ নিয়মিত আদালত কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০২) বিজ্ঞ অর্থঋণ আদালত কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৩) বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৪) বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে আপিলেট ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৫) বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৬) বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপিলেট ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক প্রচারিত রায় ও ডিক্রী;
(০৭) ওয়াকফ প্রশাসক কর্তৃক প্রচারিত আদেশ; ইত্যাদি।
বিঃদ্রঃ- আদালতের আদেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে এবং রায় ও ডিক্রিতে প্রচারিত পক্ষদের নাম ও পরিচয় এবং ভূমি তফসিল মিলিয়ে নিতে হবে।
কেন করবেন, কিভাবে করবেন ধরুন, বাবা-মার মৃত্যুর পর আপনারা ভাইবোনেরা নিজেদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চান। সাধারণত আমাদের দেশে এ রকম ক্ষেত্রে মৌখিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করেই অংশীদাররা সম্পত্তি ভোগ করে থাকেন। কিন্তু এর ফলে ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাটোয়ারা দলিল সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এই জটিলতা কমিয়ে আনা যায়। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের ২(১৫) ধারায় বণ্টন দলিল সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'বণ্টন দলিল' অর্থ এমন কোনো দলিল যার মাধ্যমে কোনো সম্পত্তির সহ-মালিকগণ কোনো নির্দিষ্ট সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয় বা নিতে সম্মত হয়। উল্লেখ্য, বণ্টন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো রাজস্ব কর্তৃপক্ষ অথবা কোনো দেওয়ানি আদালত প্রদত্ত কোনো চূড়ান্ত আদেশ এবং কোনো সালিশকারী কর্তৃক প্রদত্ত বণ্টন-নির্দেশ রোয়েদাদও 'বণ্টক দলিল'-এর অন্তর্ভুক্ত। বাটোয়ারা দলিল কখন? যৌথ পরিবারে ক্রয় করা সম্পত্তি ভোগদখলের সুবিধার্থে দখল অনুযায়ী বণ্টন করা যেতে পারে। আবার একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক একাধিক দলিল দ্বারা ক্রয়সূত্রে অর্জিত অবিভক্ত সম্পত্তি অথবা অন্য যে কোনোভাবে অর্জিত সম্পত্তি বণ্টন দলিলের মাধ্যমে বণ্টন করা যাবে। যৌথ মালিকানায় কেনা সম্পত্তিও ভোগদখলের সুবিধার্থে যে কোনো সময় আপস-বণ্টন করা যায়। যৌথ সম্পত্তির পক্ষ যতজন থাকবেন, সম্পত্তি তত ভাগ করার পর প্রত্যেক পক্ষ আলাদা আলাদাভাবে সম্পত্তি বাটোয়ারা বা বণ্টন করে নিতে পারবেন। আবার যৌথভাবে ভোগদখলরত অবস্থায় সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে যে কোনো একজন মালিক ইচ্ছা করলে তার নিজের সম্পত্তিটুকু বণ্টন করে নিতে পারেন। অন্যপক্ষরা একসঙ্গে ভোগদখল করার ইচ্ছা করলে যিনি বণ্টনক্রমে আলাদা হতে চান, তার ভাগ বাদ দিয়ে অপরাপর অংশীদাররা যৌথভাবে সম্পত্তি ভোগদখল করতে পারবেন। লিখিত চুক্তি বা বণ্টন দলিল ছাড়াও আদালত এবং সালিশি রোয়েদাদের মাধ্যমেও বাটোয়ারা কাজ নিষ্পন্ন হতে পারে। বাটোয়ারা দলিল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করা এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭(১) ধারা সংশোধন করে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। স্ট্যাম্প ফি দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগ পর্যন্ত উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন পক্ষদের ইচ্ছাধীন ছিল। বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সরকার এই দলিলের ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতোপূর্বে বণ্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি কবলা দলিলের সমপরিমাণ ছিল। এত উচ্চহারের ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক পরিশোধ করতে হয় বলে বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রেশনের পক্ষগণ তা নিবন্ধন করতে চাইত না। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের তফসিল-১ এর ৪৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বণ্টননামা দলিলে স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়। ওই অনুচ্ছেদ মোতাবেক বণ্টননামা দলিলের স্ট্যাম্প শুল্ক মূল্য নির্বিশেষে বর্তমানে মাত্র বিশ টাকা। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ১৪২ আদেশ অনুযায়ী বণ্টননামার সঙ্গে হলফনামাও সংযুক্ত করতে হয়। হলফনামার স্ট্যাম্প শুল্ক বর্তমানে পঞ্চাশ টাকা এবং শপথনামার রেজিস্ট্রেশন ফি বর্তমানে ১০০ টাকা। এছাড়া কোনো দলিলের পৃষ্ঠা বেশি হলে বর্ধিত প্রতি পাতা পঁচিশ টাকা হারে ফিস বাড়তে পারে। নিবন্ধন ফি বণ্টননামা বা বাটোয়ারা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নরূপ_ (ক) সম্পত্তির মূল্য অনূর্ধ্ব তিন লাখ টাকা হলে- ফি ৫০০ টাকা। (খ) সম্পত্তির মূল্য তিন লাখ টাকার বেশি কিন্তু দশ লাখ টাকার কম হলে- ৭০০ টাকা। (গ) সম্পত্তির মূল্য দশ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ত্রিশ লাখ টাকার কম হলে_ ১২০০ টাকা। (ঘ) সম্পত্তির মূল্য ত্রিশ লাখ টাকার বেশি কিন্তু পঞ্চাশ লাখ টাকার কম হলে_ ১৮০০ টাকা। (ঙ) সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশি হলে_ ফি গুনতে হবে ২০০০ টাকা। বণ্টনের পর অংশীদারদের কর্তব্য বণ্টননামা অনুযায়ী সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশের টাইটেলসংক্রান্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্টপক্ষ নিজের কাছে সযত্নে রাখবেন। যদি প্রত্যেক পক্ষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দলিল না থাকে তবে ফটোকপি সংরক্ষণ করতে হবে। যে পক্ষের কাছে মূল দলিল থাকবে তিনি অপর পক্ষের প্রয়োজনে তা সরবরাহ করবেন। এই বিষয়গুলো সম্পর্কেও বণ্টননামা দলিলে লিখিত বিধান থাকা উচিত। বণ্টননামায় উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো যৌথ সম্পত্তির পক্ষবৃন্দ টাইটেল অর্থাৎ কিভাবে সম্পত্তি পেলেন সে সম্পর্কে বাটোয়ারা দলিলে রিসাইটেল বা বর্ণনা থাকা উচিত। সম্পত্তি বণ্টন করার ইচ্ছা এবং পক্ষদের অংশ, অবিভক্ত সম্পত্তি কিভাবে বিভক্ত করা হলো ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে। বণ্টননামা দলিলের মূলকপি কার কাছে থাকবে সেটি দলিলে উল্লেখ করতে হয়। দলিলে যত পক্ষ থাকেন, ঠিক ততগুলো প্রতিলিপি নিবন্ধন করে নেয়া যায়। এই প্রতিলিপির স্ট্যাম্প বাবদ ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে খরচ পড়বে পঞ্চাশ টাকা থেকে একশত টাকা মাত্র। প্রতিলিপি দলিল দিয়ে প্রত্যেক পক্ষ মূল দলিলের মতোই কাজ করতে পারেন। কখনো কখনো পক্ষদের মধ্যে বণ্টনের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোনো পক্ষকে নগদ টাকা প্রদান করতে হয়। এই টাকা প্রদানের বিষয়টি দলিলে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা উচিত। উল্লেখ্য, এরকম নগদ লেনদেনের জন্য বণ্টননামা দলিলে আলাদা ফি বা স্ট্যাম্প দিতে হয় না। সব পক্ষের অংশগ্রহণ অপরিহার্য বণ্টননামার সব পক্ষকেই দলিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। কোনো পক্ষ নাবালক থাকলে তার পক্ষে যথাযথ অভিভাবক পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারেন। তবে নাবালক সাবালকত্ব অর্জন করার পর অভিভাবকের সিদ্ধান্ত না মানতে চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন। অংশীদারদের মধ্যে সমঝোতা না হলে সালিশ আদালতের মধ্যদিয়ে তার নিষ্পত্তি করতে হয়। আদালতে এ জন্য যে মামলা করতে হয়, সেটি 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। সম্পত্তি বণ্টনের মামলা করবেন কিভাবে? সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিবাদ-বিসংবাদ একটি সনাতন ব্যাপার। উত্তরাধিকার সম্পত্তি কিংবা যৌথ সম্পত্তিতে সহ-অংশীদারদের মালিকানা নির্ণয়ে নানা রকম আইনি জটিলতা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। বাটোয়ারা দলিলের মধ্য দিয়ে অংশীদাররা শুরুতে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব না হলে আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করার বিকল্প থাকে না। দৃশ্যপট-১ ফারহানারা তিন ভাই ও চার বোন। মা বেঁচে আছেন। তার বাবার মৃত্যুর সময় প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদ ও সম্পত্তি রেখে গেছেন ওয়ারিশদের জন্য। কিন্তু সম্পত্তি এখন পর্যন্ত ভাগ হয়নি। ফারহানার দুই ভাই জোর করে বেশি সম্পত্তি ভোগ করছেন। আবার তার এক ভগ্নিপতি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেও বেশ কিছু সম্পত্তি ভোগ করছেন। এর মধ্য দিয়ে বিপদে আছে ফারহানা, তার মা আর তিন বোন। তার দুই ভাই ও ছোট ভগ্নিপতি সম্পত্তি ভাগ করতে দিতে চান না। এত এত সম্পত্তি থাকার পরও ফারহানারা মারাত্মক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এতদিন যাবত সম্পত্তির দলিলপত্র ফারহানার মায়ের কাছে ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে তার ভাইয়ের ছেলে ও ছোট ভগ্নিপতি সম্পত্তির সব দলিল ফারহানার বুকে ছুরি ঠেকিয়ে লকার ভেঙে নিয়ে গেছে। যখনই তাদের পক্ষ থেকে সম্পত্তি ভাগ করতে চাওয়া হয়, তখনই তার দুই ভাই ও ছোট ভগ্নিপতি তাদের ভয়-ভীতি দেখায়। মা আর তিন বোন নিয়ে ফারহানা বেশ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দৃশ্যপট-২ সাদিয়ারা পাঁচ ভাই বোন। দুই ভাই তিন বোন। তার বাবা মৃত্যুর সময় প্রায় ১০০ বিঘা সম্পত্তি রেখে গেছেন। কিন্তু সেই সম্পত্তির কোনো অংশেই সাদিয়াদের তিন বোনের কোনো অংশ দেয়া হয়নি। দুই ভাই জবরদস্তিমূলকভাবে সকল জমি নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভোগদখল করে আসছে। সাদিয়ারা সম্পত্তিতে অংশ চাইলে ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে প্রচ- প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাদিয়াদের বিয়ের সময় প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছে বলে তাদের কোনো সম্পত্তি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে বহু চাপাচাপির পর ভাইয়েরা একটি বাটোয়ারা দলিল করে বোনদের নামমাত্র কিছু সম্পত্তি দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে চায়। কিন্তু সাদিয়ারা সেই বণ্টনে সম্মতি দেয় না। এখন সাদিয়ারা কী করতে পারে? বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিয়ে এরকম বিবাদ-বিসংবাদ অহরহ ঘটে থাকে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সম্পত্তির বৈধ হকদার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দাখিল করে সম্পত্তির অংশ বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় বিজ্ঞ আদালত ইসলামি শরিয়া ও ফারায়েজ আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করে দেন। 'বাটোয়ারা মামলা' কী? ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে 'বণ্টন'। স্থানীয় বা পারিবারিকভাবে বণ্টনের আইনগত ভিত্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করে নিলে জটিলতা অনেক কমে। এ জন্য সব শরিককে এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা 'বণ্টন মোকদ্দমা' বা 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে 'পার্টিশন স্যুট' বলা হয়। সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের_ উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এবং খরিদ সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বাটোয়ারা মামলা করার সময় সকল অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবে না। যদি অংশীদাররা আপস মতে বণ্টন করতে রাজি না হন, সে ক্ষেত্রে যে কোনো অংশীদার বণ্টনের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় কী কী প্রয়োজন? প্রথমেই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে। মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়। বণ্টনের শর্তাবলি বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত। যেমন_ সম্পত্তি পরিমাপ করে অংশীদারদের জমির সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং বণ্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে; তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে; বণ্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে; প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকদের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত হতে হবে; যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে; সহ-অংশীদাররা আপস বণ্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায়। বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সব সহ-শরিকের মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে। এ ধরনের মামলায় দুইবার দুটি ডিক্রি হয়, যার প্রথমটির নাম প্রাথমিক ডিক্রি আর পরেরটার নাম চূড়ান্ত ডিক্রি। প্রাথমিক ডিক্রিতে হিস্যা অনুযায়ী বণ্টনের আদেশ দেয়া হয়। আর চূড়ান্ত ডিক্রিতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরেজমিনে সম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পিলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রি প্রচার করা হয়। আদালত প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রিপ্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। বণ্টন হওয়ার পর করণীয় আদালতের মাধ্যমে বণ্টন হওয়ার পর এবং বণ্টন দলিল রেজিস্ট্রি করার পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারি, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনাও প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নামজারি হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা। বণ্টনের পরও দখল না পেলে আদালত থেকে বাটোয়ারা মামলার ডিক্রি পাওয়ার পরও সেই মোতাবেক দখল বুঝিয়ে দেয়া না হলে 'উচ্ছেদের মামলা' করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অংশীদারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।