ভুমি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ+ভূমি জরিপ: CS, SA, PS, RS, BS, সিটি জরিপ, দিয়ারা জরিপ কি?

0
ভূমি সংক্রান্ত সাধারণ কিছু তথ্য বা শব্দাবলি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি কিন্তু তার সঠিক ইতিহাস বা অর্থ অনেকের জানা নেই। আসুন জেনে নেই এমন কিছু শব্দের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ব্যবহার।
ভূমি বা Land কাকে বলে?
“ভূমি কাকে বলে?”- এর আইনী সংজ্ঞা রয়েছে। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950-এর ২(১৬)- ধারা মতে,
“ভূমি (land) বলতে আবাদি, অনাবাদি অথবা বছরের যেকোন সময় পানিতে ভরা থাকে এবং ভূমি হতে প্রাপ্ত সুফল, ঘরবাড়ি বা দালান কোঠা বা মাটির সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য দ্রব্য অথবা স্হায়ীভাবে সংযুক্ত দ্রব্য এর অন্তর্ভুক্ত বুঝাবে।”
২। ভূমি জরিপ:
জরিপ তথা ইংরেজী ঝঁৎাবু শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। ভূমি জরিপ বলতে বিভিন্ন মৌজা তথা গ্রাম বা সীমানা ভিত্তিক নকশা তৈরি বা জমির মালিকানা সংক্রান্ত পুরাতন রেকর্ড পর্যালোচনা বা যাচাই বাছাইকে বুঝায়। অর্থাৎ সহজ ভাষায় জরিপের সময় পুরাতন তৈরীকৃত নকশা ও রেকর্ড সংশোধন করা এবং জমির আকৃতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে থাকলে বা মালিকানার পরিবর্তন হয়ে থাকলে সেই মোতাবেক সামঞ্জস্য রেখে মৌজা বা সীমানার মধ্যে জমির নকশা এবং কাগজ পত্রের রেকর্ড তৈরি করাকে বুঝায়। আইনের ভাষায় বলা যায়, জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০, সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট (এস.এস.) ম্যানুয়াল-১৯৩৫, সার্ভে এক্ট ১৮৭৫, প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫, এবং অপরাপর জরিপ আইনের বিধান মতে মৌজা ভিত্তিক ভূমির রেকর্ড তথা খতিয়ান ও নকসা প্রস্তুতের কার্যক্রমকে ভূমি জরিপ বলা হয় ।

ভূমি জরিপ/রেকর্ড কাকে বলে?
ভূমি জরিপ হচ্ছে ভূমির মালিকানা সম্বলিত ইতিহাসের সরেজমিন ইতিবৃত্ত। আইনী সংজ্ঞা হচ্ছে, The Survey Act, 1875 এর ২ ধারা অনুযায়ী, ‘জরিপ’-এর অন্তর্ভুক্ত হইবে সীমানা চিহ্নিতকরণ, নদীতীর বরাবর ক্ষয়প্রাপ্ত বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জমি, নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে পুনঃউদ্ভব বা নূতন উদ্ভবকৃত জমির পরিমাণ নির্ধারণ এবং জরিপের সহিত যুক্ত পূর্ববর্তী সকল কার্যক্রম।
একটি ভূমির মালিক কে এবং তার সীমানা কতটুকু এটা ভূমি জরিপের মাধ্যমে নকশা/ম্যাপ নির্ণয় করা হয়। এই নকশা এবং ম্যাপ অনুসারে মালিকানা সম্পর্কিত তখ্য যেমন ভূমিটি কোন মৌজায় অবস্থিত, এর খতিয়ান নাম্বার, ভূমির দাগ নাম্বার, মালিক ও দখলদারের বিবরণ ইত্যাদি প্রকাশিত হয় যাকে খতিয়ান বলে। রেকর্ড বা জরিপ প্রচলিতভাবে খতিয়ান বা স্বত্ত্বলিপি বা Record of Rights (RoR) নামেও পরিচিত। রেকর্ড বা জরিপের ভিত্তিতে ভূমি মালিকানা সম্বলিত বিবরণ খতিয়ান হিসেবে পরিচিত, যেমন CS খতিয়ান, RS খতিয়ান, ইত্যাদি।

আমাদের দেশে পরিচালিত ভূমি জরিপ বা রেকর্ড গুলো হচ্ছে;
1. CS -Cadastral Survey (1888)
2. SA- (1956)
3. PS – Pakistan Survey
4. RS -Revitionel Survey
5. BS- Bangladesh Survey (1990)
6. সিটি জরিপ
7. দিয়ারা জরিপ

সি.এস. জরিপ/রেকর্ড (Cadastral Survey)

“সিএস” হলো Cadastral Survey (CS) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। একে ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপ বলা হয় যা ১৮৮৮ (ভূমি মন্ত্রণালয় অুনসারে ১৮৮৭) সাল হতে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই জরিপ ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের ১০ম পরিচ্ছেদে অনুসারে সিলেট ও পার্বত্য জেলা ব্যতীত সারা দেশে পরিচালিত হয়। উক্ত জরিপের মাধ্যমে জমির বিস্তারিত মৌজা নকশা (ম্যাপ) প্রস্তুত করা হয় এবং প্রত্যেক মালিকের জন্য দাগ নম্বর উল্লেখপুর্বক ভূমির বাস্তব অবস্থা, আয়তন, শ্রেণী, পরিমাণ, খাজনার পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। এ জরিপ পি-৭০ সীটে কিস্তোয়ারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
সিএস জরিপ ১৮৮৮ সালে কক্সবাজারের রামু থানা হতে আরম্ভ হয় এবং ১৯৪০ সালে দিনাজপুর জেলায় শেষ হয়। সে সময়ে সিলেট জেলা আসাম প্রদেশের অধীন থাকায় সিলেট জেলায় সিএস জরিপ হয়নি। তবে জরুরী বিবেচনায় ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইনের (Sylhet tenancy Act) আওতায় সিলেট জেলার ক্যাডাষ্ট্রাল সার্ভে ১৯৫০ সালে আরম্ভ করা হয় এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর অধীনে ঐ জরিপ ১৯৬৩ সালে শেষ হয়।
সি.এস. জরিপে সময় প্রস্তুতকৃত খতিয়ানে জমিদারগণের নাম খতিয়ানের উপরিভাগে এবং দখলকার রায়তের নাম খতিয়ানের নিচে লেখা হত। সে সময় জমিদারগণ সরকার পক্ষে জমির মালিক ছিলেন এবং রায়তগণ প্রজা হিসেবে শুধুমাত্র ভোগ দখলকার ছিলেন।
প্রথম জরিপ এই জরিপ এবং প্রস্তুতকৃত নকশা ও খতিয়ান খুবই নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে এখনো গ্রহণীয়। মামলার বা ভূমির জটিলতা নিরসনের ক্ষেত্রে এই জরিপকে বেস হিসেবে অনেক সময় গণ্য করা হয়।

ক) এস.এ. জরিপ (State Acquisition Survey)

১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রদেশে জমিদারী অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২/৪/১৯৫৬ তারিখে এই আইনের ৩ ধারার আওতাধীন বিজ্ঞপ্তির মূলে সরকার কর্তৃক সকল জমিদারি দখল নেয়ার পর উক্ত এ্যাক্টের ১৭ ধারা মোতাবেক যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তা এস এ খতিয়ান বলে পরিচিত ।
মূলত, জমিদারী ও মধ্যস্বত্ব বিলোপ করে জমিদারগণকে প্রদেয় ক্ষতিপূরণ তালিকা প্রণয়ন এবং ভূমি মালিকগণকে/রায়তকে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনয়ন করার লক্ষ্যে সে সময় একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ ও রেকর্ড সংশোধনী কার্যক্রম পরিচালিত হয় যা পরবর্তীতে এসএ খতিয়ান বলে পরিচিত পায় । ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে ভূমি মালিকের নাম ও জমির বিবরণাদি সম্বলিত হাতেলেখা রেকর্ড/খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় । সে সময় এই রেকর্ড মোট তিন কপি প্রস্তুত করা হয় যার মধ্যে একটি জেলা রেকর্ড রুমে, এক কপি তহশলি ( ইউনিয়ন ভূমি অফিস) অফিসে এবং অন্যটি সার্কেল পরিদর্শক (উপজেলা রাজস্ব) অফিসে প্রদান করা হয় । জরুরী তাগিদে জমিদারগন হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ বা খাতিয়ান প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল।

খ) পি.এস. জরিপ (Pakistan Survey)

এস.এ. জরিপকেই পি.এস. জরিপ বলে। ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়।

গ) আর.এস. জরিপ ( Revisional Survey)

সি.এস. জরিপ সম্পন্ন হওয়ার সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। জমির অবস্থা, প্রকৃতি, মালিক, দখলদার ইত্যাদি হালনাগাদ করার লক্ষ্যে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এস.এ. জরিপের সময় সরেজমিনে তদন্ত বা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা হয়নি। জমিদারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এস.এ জরিপ বা খাতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল যার কারণে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যায়। এই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয় যা আর.এস বা. Revisional Survey জরিপ হিসেবে পরিচিত। এই জরিপে প্রস্তুতকৃত নকশা (ম্যাপ) এবং খতিয়ান নির্ভূল হিসেবে গ্রহণীয়।

ঘ) সিটি জরিপ (City Survey)
সিটি জরিপ এর আর এক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ। আর.এস. জরিপ এর পর বাংলাদেশ সরকার কর্তিক অনুমতি ক্রমে এ জরিপ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। এ যাবত কালে সর্বশেষ ও আধুনিক জরিপ এটি। এ জরিপের পরচা কম্পিউটার প্রিন্ট এ পকাশিত হয়।

ঙ) দিয়ারা জরিপ কি?

দিয়ারা জরিপ হলো দরিয়া সম্পর্কিত জরিপ। জেগে উঠা নতুন ভূখন্ড (চর) জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে সিকস্তি পয়স্তির কারণে ভৌগলিক সীমারেখা ও স্বত্বের পরিবর্তন হলে নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নতুন জরিপ করা হয়। এ সমস্ত জরিপে নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। এটি অতি পুরাতন জরিপ। ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ আরম্ভ হয় ১৮৮৮ সালে, পক্ষান্তরে দিয়ারা জরিপ আরম্ভ হয় ১৮৬২ সালে। দিয়ারা জরিপে সাধারন জরিপের জন্য প্রযোজ্য সকল স্তর অনুসরন করে পয়স্তি ভূমির(চর) নক্সা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে ৪টি (রাজশাহী, নরসিংদী, চট্রগ্রাম ও বরিশাল) বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক অফিস ও ক্যাম্পের মাধ্যমে সারাদেশের সুনির্দির্ষ্ট কিছু মৌজায় এ জরিপ কাজ পরিচালিত হয়।

৩।নকশা:
নকশা হলো কোনো মৌজাভুক্ত ভূমির বাস্তব চিত্র বা ভূ-চিত্র।
৪।মৌজা:
মৌজা হলো জরিপের একটি ভৌগোলিক ইউনিট। একটি ইউনিয়নকে কয়েকটি মৌজায় বিভক্ত করে এ ভৌগলিক ইউনিট করা হয়।
৫। জেএল নম্বর:
উপজেলার অন্তর্গত মৌজা সমূহের পরিচিতমূলক ক্রমিক নম্বরকে জেএল নম্বর বা জুরিসডিকশন লিস্ট নম্বর বলে । মৌজার উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে শুরু করে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে গিয়ে এ নম্বর দেয়া শেষ করা হয়।
৬।খতিয়ান:
খতিয়ান হলো দখল স্বত্বের প্রামাণ্য দলিল। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। প্রতি খতিয়ানের একটি পৃথক পরিচিতি নম্বর থাকে। খতিয়ানকে “রেকর্ড অব রাইটস” বা “স্বত্বলিপি” বলা হয়। খতিয়ান হচ্ছে নিখুঁত মালিকানা স্বত্ব ও দখলী স্বত্বের প্রমাণ্য দলিল। খতিয়ানে তৌজী নম্বর, জেএল নম্বর, স্বত্বের বিবরণ, মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা থাকে। খতিয়ানের অপর পৃষ্ঠায় দাগ নম্বর, প্রত্যেক দাগের উত্তর সীমা (উত্তর দাগ), ভূমির শ্রেণী দখলকারের নাম, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা, হিস্যা মতে পরিমাণ লেখা থাকে। উপযুক্ত আদালত বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভুল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত খতিয়ান নির্ভূল হিসাবে গণ্য হতে থাকে।
৭। দাগ নম্বর:
একটি মৌজার বিভিন্ন মালিকের বা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত ভূমিকে নকশায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকে বলে দাগ নম্বর।
৮। বাটা দাগ:
নকশায় ভুল বসত কোনো প্লট এর দাগ নম্বর বাদ পড়লে, শেষ প্লট নম্বরটির পরের নম্বরটি নিচে লিখে এবং বাদ পড়া  প্লটের নম্বরটি উপরে লিখে (ভগ্নাংশের ন্যায়) প্রাপ্ত যে নম্বর পাওয়া যায় তা দিয়ে বাদ পড়া প্লটটি চিহ্নিত করা হয় তাকে বাটা দাগ বলে।
৯। ছুট দাগ:
নকশায় দাগ নম্বর বসানোর সময় ভুল বসতঃ কোনো একটি অংক/সংখ্যা বাদ পড়লে অর্থাৎ ছুটে গেলে তাকে ছুট দাগ বলে। যেমন ১, ২, ৩ বসানোর পর ৫ ও ৬ বসিয়ে ফেলা এখানে ৪ ছুট দাগ। অর্থাত ঐ নকশায় ৪ নম্বর নামে কোন প্লটের অস্তিত্ব নেই।
১০। পর্চা:
জরিপ চলাকালীন সময়ে বুজারত স্তরে ভূমি মালিককে প্রস্তুতকৃত খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি দেয়া হয় তাকে পর্চা বলে। পর্চা জরিপ কর্মচারী কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত হওয়া উচিত।
১১। হাল্ডিং:
একটি খতিয়ানে একটি দাগ থাকতে পারে আবার একাধিক দাগও থাকতে পারে। এরূপ একটি খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ভূমিকে হোল্ডিং বা জোত-জমা বলে। হোল্ডিং এর পরিচিত নম্বরকে হোল্ডিং নম্বর বলে।
১২। দাখিলা:
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের বিপরীতে প্রদত্ত রসিদকে বলে দাখিলা বা আরআর (রেন্ট রিসীট) দাখিলা ভূমি মালিকানা প্রমাণের প্রাথমিক দলিল।
১৩। ডিসিআর:
ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারী পাওনা আদায়ের জন্য যে রসিদ দেয়া হয় তাকে ডিসিআর (ডুপিকেট কার্বন রিসীট) বলে।
১৪। ফিল্ড বুক:
জরিপের প্রয়োজনে কিস্তোয়ার কালে অফসেট গ্রহণসহ চলমান চেইনের রিডিং লিখনের জন্য যে বই ব্যবহৃত হয় তাকে ফিল্ড বুক বলে। এটি দেখে পরবর্তীতে টেবিলে পি-৭০ সীটে স্বহস্তে নকশা অংকন করা হয়।
১৫। জরিপকালে ব্যবহৃত কালি/ (রং) এর বিবরণ:
ক) খানাপুরী স্তরে ব্যবহার করতে হবে কালো কালি
খ) বুজারত স্তরে ব্যবহার করতে হবে সবুজ কালি
গ) তসদিক স্তরে ব্যবহার করতে হবে লাল কালি
ঘ) আপত্তি স্তরে ব্যবহার করতে হবে বু-কোবাল্ট কালি
ঙ) আপিল স্তরে ব্যবহার করতে হবে কালো কালি
১৬। পেরীফেরী:
হাট বাজারের আয়তন প্রতিয়নত সম্প্রসারিত হয়ে থাকে। এরূপ সম্প্রসারিত অংশকে বাজারের অন্তর্ভূক্ত করা, হাট-বাজারের তোহামহাল, চান্দিনা ভিটি ও বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সার্ভেয়ার দ্বারা সরজমিনে পরিমাপপূর্বক হাট-বাজারের নক্সা তৈরীসহ চর্তুসীমা নির্ধারণ করাকে বলে পেরীফেরী।
১৭। নালজমি:
আবাদযোগ্য সমতল জমিকে নাল জমি বলে।
১৮। তৌজি:
১৭৯৩ সালে প্রবর্তীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীয় ভূমির জন্য কালেক্টরীতে যে রেজিস্ট্রি বই থাকতো তাকে তৌজি বলে। প্রত্যেকটি তৌজিরই ক্রমিক নম্বর থাকে। জমিদারের অধীনে প্রজার জোতকেও তৌজি বলা হতো।
১৯। কটকবলা:
সুদের পরিবর্তে মহাজনের দখলে জমি দিয়ে ঋণ নিয়ে যে দলিল দেয়া হয় তাকে কটকবলা বলে। খাতক যতদিন টাকা পরিশোধ করবে না ততদিন মহাজন এ জমি ভোগ দখল করতে থাকে।
২০। চান্দিনা:
বাজারের ভিটি ভূমিকে চান্দিনা বলা হয়। এটি মূলত দোকানদারের হোল্ডিং।
২১। জমা বন্ধী:
খাজনার তালিকাকে জমা বন্ধী বলে।
২২। চালা ভূমি:
নালের চেয়ে উঁচু আবাদী ভূমি, পুকুরের পাড় ইত্যাদি রকম ভূমিকে বলে চালা।
২৩। হালট:
জমিজমার মধ্যবর্তী চওড়া আইল বা পথ যার উপর দিয়ে চাষী হাল বলদ নিয়ে চলাফেরা করে। হালটকে গোপাটও বলা হয়।
২৪। চর্চা জরিপ:
চর্চা অর্থ চর পয়স্থি জমি বা চরের জরিপকে বলে চর্চা জরিপ। এই জরিপ করে যে নকশা তৈরি করা হয় তাকে চর্চা নকশা বলে।
২৫। তফসিল:
কোনা জমি যে মৌজায় অবস্থিত সে মৌজার নাম, জেএল নম্বর, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির শ্রেণী, পরিমাণ, জমির চৌহদ্দি বর্ণনা ইত্যাদি পরিচিতি সম্বলিত বিবরণকে ঐ জমির তফসিল বলে।
২৬। বাইদ:
নীচু কৃষি জমিকে বাইদ বলে।
২৭। নয়ন জুলি:
বাঁধ সংলগ্ন নীচু জলা ভূমিকে বলে নয়ন জুলি।

Maruf Hossen Jewel
marufhossenjewel@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top