সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭ Specific Relief Act-১৮৭৭

0
প্রাথমিক আলোচনাঃ
»এই আইনটি খুব পুরাতন। ইকুইটি অর্থাৎ ন্যায় পরায়ণতা
হতে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের উৎপত্তি। যা সবসময়
দেওয়ানি কার্যবিধিকে অনুসরণ করে থাকে। তাই
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের সব মোকদ্দমা-ই দেওয়ানি
প্রকৃতির মামলা।
এক নজরেঃ
১৮৭৭ সালের ১নং আইন
কার্যকাল- ১লা মে ১৮৭৭
মোট ধারা - ৫৭টি
অধ্যায়- ১০টি
খন্ড- ৩টি
মূল আইন (Substantive Law)
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
»সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ২০০৪ সালের ২৭নং আইন
দ্বারা সর্বশেষ সংশোধন করে ২১(ক) সংযোজন করা হয়।
»সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ধারা (৪৫-৫১) পর্যন্ত বাতিল
করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাতিল হলে ধারা গণনা করা
হবে, পক্ষান্তরে বিলুপ্ত হলে গণনা করা হবে না।
»সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন একটি মূল আইন (Substantive
Law) তবে প্রশ্নপত্রে মূল আইন না থাকলে পদ্ধতিগত আইন
হবে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন কি?
»দেওয়ানী মামলা দায়ের ফলে বাদী যে প্রতিকার
প্রার্থনা করে এবং যে আইনের মাধ্যমে আদালত ডিক্রি
প্রদান করে এই প্রতিকার মঞ্জুর করে তাকে সুনির্দিষ্ট
প্রতিকার আইন বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, যখন অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা
জাগে সেই ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে যে আইনের মাধ্যমে
প্রতিকার দেওয়া হয় তাই মূলত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন।
[উদাহরণ] ক’ ৫ শতাংশ জমি খ’-এর কাছে বিক্রয় করার
লক্ষ্যে ৫ লক্ষ টাকার বায়নামা করে। কিন্তু
পরবর্তীকালে ক’ জমিটি নিতে অসম্মতি জানালে ক’-এর
যে ক্ষতির জন্ম দিবে। সুতরাং এখানে আদালত ক’-এর
ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে যে প্রতিকার দেওয়া হয় তা-ই মূলত
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-কে ৩টি খন্ডে বিভক্ত করা
হয়েছে-
»১ম খন্ড [ধারা ১-৭ পর্যন্ত]
»২য় খন্ড [ধারা ৮-৫১ পর্যন্ত]
»৩য় খন্ড [ধারা ৫২-৫৭ পর্যন্ত]
[ধারা ৫] (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার যেভাবে প্রদান করা হয়)
এই ধারায় ৫টি নিয়মে প্রতিকার দেওয়া হয়।
১। অর্পণ বা হস্তান্তরের মাধ্যমে;
২। চুক্তি প্রবল বা বাস্তবায়নের মাধ্যমে;
৩। ঘোষণার মাধ্যমে;
৪। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে;
৫। তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের মাধ্যমে।
[ধারা ৭] (দন্ড বা শাস্তির বিধান নেই)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন কোন প্রকার দ- কিংবা
শান্তি প্রদান করে না।
অর্থাৎ কাউকে-
»জরিমানা করবে না;
»সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবে না;
»কারাগারে আটক রাখা যাবে না।
[ধারা ৮] (স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব পূনরুদ্ধার)
»স্বত্বসহ দখল পূনরুদ্ধারের মামলা করতে চাইলে ৮ ধারার
অধীনে মামলা করতে হবে। ৮ ধারাটি স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়,
বিধায় এই ধারায় মামলা করতে গেলে ৪২ ধারাকে
অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু ৪২ ধারায় মামলা করতে গেলে
৮ ধারার প্রয়োজন নেই।
সুতরাং ৮ ও ৪২ ধারার মামলাকে স্বত্ব সাব্যস্ত খাস
দখলের মোকদ্দমা বলা হয়।
কোর্ট ফি ২ প্রকার-
১। মূল্যানুপাতিক (Advalorem) কোর্ট ফি।
২। নির্ধারিত (Fixed) কোর্ট ফি।
উল্লেখ্য, মোকদ্দমার মূল্যমানের উপর ২% হারে
মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। এবং
সর্বোচ্চ অ্যাডভোলোরেম কোর্ট ফি ৪০ হাজার টাকা।
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
»৮ ধারা কোর্ট ফি মূল্যানুপাতিক পক্ষান্তরে ৪২ ধারার
কোর্ট ফি নির্ধারিত বা ফিক্সড।
»৮ ধারাতে আপিল, রিভিউ, রিভিশন করা যায় এবং
সরকার অর্থাৎ সকলের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়।
»তামাদিকাল- বেদখল হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ১২
বৎসর [অনুঃ ১৪২, তামাদি আইন ১৯০৮]
»স্বত্ব-ই হলো ৮ ধারার মূল বিষয়।
উল্লেখ্য, ৪২ ধারার মামলা মূলত ঘোষণামূলক মোকদ্দমা
যা আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
ঘোষণামূলক মোকদ্দমা ২টি কারণে করা হয়-
»স্বত্ব ও মর্যাদার অধিকার;
»পদের অধিকার।
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
»ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় আনুসঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া
বাধ্যতামূলক। এবং ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় আনুসঙ্গিক
প্রতিকার না চাইলে আদালত কোন প্রতিকারই মঞ্জুর
করবে না।
[ধারা ৯] (স্থাবর সম্পত্তির দখল পূনরুদ্ধার)
»কোন ব্যক্তিকে জোর পূর্বক বা বেআইনিভাবে তার
দখলীয় স্থাবর সম্পত্তি হতে বেদখল কিংবা উচ্ছেদ করা
হলে ৯ ধারায় মামলা দায়ের করতে হবে।
তবে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে-
»বেআইনিভাবে বেদখল করা হয়েছে;
»সম্মতি ব্যতীত বেদখল করা হয়েছে;
»৬ মাসের মধ্যে বেদখল করা হয়েছে।
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
»৯ ধারার কোর্ট ফি মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফির অর্ধেক।
»৯ ধারাতে আপিল, রিভিউ নেই তবে রিভিশন করা যাবে
এবং সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না।
»তামাদিকাল- বেদখল হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৬ মাস
[অনুঃ৩, তামাদি আইন ১৯০৮]
»৯ ধারার মামলায় স্বত্ত্ব কোন বাধা নয় তবে বেদখল
করা হয়েছে কিনা এটিই মূল বিষয়।
[৮ ও ৯ ধারার পার্থক্য-]
»৮ ধারায় মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে
হবে জমির স্বত্ব ও দখল। কিন্তু ৯ ধারার মামলা দায়ের
করার ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে জমির দখল ও বেদখল।
»৮ ধারার মামলার তামাদির মেয়াদ ১২ বছর। কিন্তু ৯
ধারায় মামলার তামাদির মেয়াদ ৬ মাস।
»৮ ধারায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে।
কিন্তু ৯ ধারায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না।
[ধারা ১০] (অস্থাবর সম্পত্তি দখল পূনরুদ্ধার)
»অস্থাবর সম্পত্তি বলতে যা বহন করা যায়। যেমন- দলিল-
পত্র, প্রবেট, চুক্তিপত্র ইত্যাদি অস্থাবর সম্পত্তির
ক্ষেত্রে ১০ ধারায় মামলা করতে হবে।
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
»১০ ধারার মামলায় তামাদি কোন বাধা নয়।
»দেওয়ানির ক্ষেত্রে "মোকদ্দমা" এবং
ফৌজদারির ক্ষেত্রে "মামলা" শব্দ ব্যবহার করা হয়।
»ইংলিশ Term: দেওয়ানি-তে Suit এবং ফৌজদারি-তে
Case বলা হয়।
»যেখানে বিশেষ আইন উপস্থিত, সেখানে সাধারণ আইন
সর্বদাই অদ্বিতীয়।
[ধারা ৪২] (ঘোষণামূলক মোকদ্দমা)
[উদাহরণ] ক’ বৈধভাবে কোন জমির দখলে আছে।
পার্শ্ববর্তী লোকেরা ঐ জমির মাঝখানে যাতায়াতের
অধিকার দাবি করে, গ্রামবাসির এই অধিকার আইনগত
অধিকার নয় বলে ক’ ৪২ ধারা মতে আদালতে ১টি
ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন।
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
»ইহাকে বিজ্ঞাপনি মোকদ্দমাও বলা হয়।
»তামাদিকাল-৬ বৎসর [আনুসঙ্গিক প্রতিকার ব্যতীত
কেবলমাত্র ঘোষণামূলক মোকদ্দমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য]
»ঘোষণামূলক মোকদ্দমার কোর্ট ফি নির্ধারিত (Fixed)
অর্থাৎ
-প্রত্যেক ঘোষণার জন্য ৩০০ টাকা হারে কোর্ট ফি
প্রদান করতে হবে।
»ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় ডিক্রিজারির প্রয়োজন নেই।
[ধারা ১২] (চুক্তি প্রবল বা বলবৎ করার মামলা)
৪টি বিষয়ের উপর চুক্তি ভঙ্গের মামলা করা যায়-
১। যখন সম্মতিভূক্ত কার্য বা চুক্তি পুরোপুরি বা আংশিক
কারো জিম্মায় থাকে সেই চুক্তি কার্যকর [১৯৭৩ সালের
৮নং আইন দ্বারা বারিত]
২। যখন সম্মতিভূক্ত চুক্তি কার্যকর না করলে কার্যত যে
ক্ষতি হয় তা কোন কিছুর বিনিময়ে নির্ণয় করা সম্ভব না,
সেই চুক্তি কার্যকর।
৩। যখন সম্মতিভুক্ত কোন চুক্তি কার্যকর না করলে, কার্যত
যে ক্ষতি হয় তা দ্বারা পুরোপুরি আর্থিক ক্ষতিপূরণ সম্ভব
না, সেই চুক্তি কার্যকর।
৪। চুক্তি সম্পাদন করলে কার্যত যে ক্ষতি হয় এর ফলে
কোন প্রকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওযা সম্ভব না, সেই
চুক্তি কার্যকর।
মনে রাখা দরকারঃ
»চুক্তি প্রবলের তামাদিকাল ১ বৎসর [অনুঃ ১১৩ তামাদি
আইন ১৯০৮]
[ধারা ২১] (যে চুক্তি সমূহ সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা
যায় না)
নিম্নে ৮টি ক্ষেত্রে চুক্তি বাস্তবায়ন করা যায় না-
১। যেখানে আর্থিক ক্ষতিপূরণে যথেষ্ট;
২। যে চুক্তি সূক্ষ্ম ও জটিল বিবরণে নির্ভর করে;
৩। চুক্তির শর্তাবলি আদালত নির্ণয় করতে পারে না;
৪। যে চুক্তি তার প্রকৃতিগত কারণে বাতিলযোগ্য;
৫। জিম্মাদারি জিম্মার সীমা লংঘন করলে;
৬। যে চুক্তির অংশ বিশেষ চুক্তির আগেই বিলুপ্ত;
৭। কোন কোম্পানির কর্মকর্তা তার ক্ষমতার বহির্ভূত
চুক্তি করলে;
৮। ৩ বৎসরের বেশি সময় ধরে যে চুক্তি কাজ করে যেতে
পারে।
[ধারা ২১ক] (স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যা
করতে হবে)
»বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিষ্ট্রি করতে হবে।
»ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সম্পত্তি দখলে থাকতে হবে এবং
হস্তান্তরের সময় অবশ্যই সম্পত্তির কিছু অংশ বা
পুরোপুরি অংশ বুঝিয়ে দিতে হবে।
»যে সম্পত্তির চুক্তি হয়েছে মোকদ্দমা করতে হলে, উক্ত
সম্পত্তির পুরো মূল্য আদালতে জমা দিতে হবে।
মনে রাখা প্রয়োজনঃ
[ধারা ২১(ক)] ২০০৪ সালে সর্বশেষ সংশোধনের মাধ্যমে
সংযোজন করা হয় এবং ২০০৫ সালের ১লা জুলাই হতে
কার্যকর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top